বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্স গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা কাউন্সিল (বিএমআরসি) থেকে মানবদেহে প্রয়োগের নৈতিক অনুমোদন পেয়েছে। গ্লোব বায়োটেকের হয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনাকারী দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান। তিনি বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা।
প্রথম আলো: বঙ্গভ্যাক্স টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনাকারী দলের প্রধান আপনি। টিকাটি মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন মিলেছে, কবে শুরু হচ্ছে এ কাজ? কতজনের ওপর প্রয়োগ করা হবে?
মামুন আল মাহতাব: আমরা এখন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য আবেদন করব। আমরা আশা করছি, এই অনুমোদন পেয়ে গেলে দ্রুতই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটি শুরু করতে পারব।
প্রথম আলো: ট্রায়াল কাদের ওপর পরিচালনা করা হবে? পুরো ট্রায়াল নিয়ে কিছু বলুন।
মামুন আল মাহতাব: ৬৪ জন ভলান্টিয়ারের ওপর ফেজ-১ ট্রায়ালটি পরিচালনা করা হবে। এঁরা হচ্ছেন ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী সুস্থ বাংলাদেশি নাগরিক। তাঁরা সেই ধরনের ব্যক্তি, যাঁরা এর আগে কোভিডের টিকা নেননি। শুরু করার পর ট্রায়ালটি শেষ করতে আমাদের ৩৫ দিন সময় লাগবে।
প্রথম আলো: বঙ্গভ্যাক্সই প্রথম কোভিড-১৯–এর টিকা, যার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে দেশে। বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য কতটুকু গুরুত্ব বহন করে?
মামুন আল মাহতাব: বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমরা নানা ক্ষেত্রেই উন্নয়নের জন্য বিশ্বের রোল মডেল হলেও স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা নিয়ে আমাদের অনেকেরই হয়তোবা কিছুটা দ্বিধা ছিল। এমনকি চলমান মহামারির সময় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত আর দেশের ওষুধশিল্পের এমন প্রশংসনীয় সাফল্যের পরও। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গভ্যাক্স সেই জায়গা পূরণ করবে এবং দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রতি দেশ ও দেশের বাইরে আস্থার সৃষ্টি করবে।
প্রথম আলো: এর আগে এ টিকা খরগোশ ও শিপাঞ্জির ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। সেগুলোর সফলতা সম্পর্কে বলুন।
মামুন আল মাহতাব: আমরা ইঁদুর ও বানরের ওপর বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে দেখেছি যে এই টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এর একটি ডোজে প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলো: করোনার টিকাগুলোর প্রয়োগ শুরুর পর ডেলটা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গভ্যাক্সে এটি প্রতিরোধে কোনো সুরক্ষা তৈরির বিষয় থাকবে?
মামুন আল মাহতাব: আমরা বিএমআরসিতে নৈতিক অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর আমাদের বলা হয়েছিল, বানরের ওপর টিকাটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে সেসব ডেটা জমা দিতে। এই সময়টায় বাংলাদেশসহ পৃথিবীজুড়ে ডেলটা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ে। আমরাও বঙ্গভ্যাক্সকে নতুনভাবে ডেলটা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে ডিজাইন করি। বানরের ওপর পরিচালিত ট্রায়ালে প্রমাণিত হয়েছে যে বঙ্গভ্যাক্সের নতুন ভার্সনটি ডেলটা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর।
প্রথম আলো: এ টিকা ৬৪ জনের ওপর প্রয়োগ করা হবে বলে ঠিক করেছেন। বিশ্বে অন্য টিকাগুলোর ক্ষেত্রে এ সংখ্যা কেমন ছিল?
মামুন আল মাহতাব: ফেজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালটির জন্য ভলান্টিয়ারদের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা ফাইজার ও মর্ডানার ট্রায়ালগুলো বিশ্লেষণ করে একই ধরনের স্যাম্পল সাইজ নির্ধারণ করেছি এবং বিএমআরসি সেটি অনুমোদনও দিয়েছে। এর কারণ, ফাইজার, মর্ডানা ও বঙ্গভ্যাক্স—তিনটিই এমআরএনএ ভ্যাক্সিন।
প্রথম আলো: বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে কতটুকু আশাবাদী আপনারা?
মামুন আল মাহতাব: বঙ্গভ্যাক্স নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। কারণ, এটি বাংলাদেশে উদ্ভাবিত প্রথম টিকা। এটি যে শুধু আমাদের সক্ষমতার বিষয় আমাদেরকে নতুনভাবে আশ্বস্ত করবে, তা–ই নয়, এটি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। পাশাপাশি আমরা প্রত্যাশা করছি, এটি হতে যাচ্ছে ডেলটা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত একটি একক ডোজের টিকা।