করোনা রোগীদের ৯৬ শতাংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন বাড়িতে। বাকি ৪ শতাংশের চিকিৎসা হচ্ছে হাসপাতালে। বাড়িতে থাকা রোগীদের বড় অংশ টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রায় তিন লাখ করোনা রোগী এই সেবা পেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কল সেন্টার স্বাস্থ্য বাতায়ন এই তথ্য দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ দেশের মানুষকে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে আসছে ২০১৫ সাল থেকে। তবে মহামারির সময় এই সেবা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। করোনায় সংক্রমিত রোগী, সন্দেহভাজন করোনা রোগী এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত টেলিফোন কল পাচ্ছে সেন্টারটি। প্রতিদিন কলের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’–এর কার্যালয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি এই কল সেন্টার পরিচালনা করে। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক উদ্যোগ এটুআই, আইসিটি বিভাগ পরিচালনায় সহায়তা করে। গত শনিবার স্বাস্থ্য বাতায়ন কার্যালয় গিয়ে কথা হয় সিনেসিস আইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।
নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর কল সেন্টারের গুরুত্ব বেড়ে যায়। হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে অনেকেই নিরুৎসাহ বোধ করেন, তাঁদের বড় ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে কল সেন্টার। মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কল সেন্টারে জনবলসহ সেবার পরিধি বাড়ানো হয়। কল সেন্টারের মধ্যেই ‘কোভিড-১৯ হেলথ কেয়ার সেন্টার’ স্থাপন করা হয়। ১৪ জুন থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
একটি বহুতল ভবনের চারটি পৃথক কক্ষ থেকে টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম চলে। এর একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, এক একটি টেবিলে দুটি করে কম্পিউটার, দুটি চেয়ার। কিন্তু প্রতি টেবিলে একজন করে চিকিৎসক কানে যন্ত্র লাগিয়ে কথা বলছেন। কর্মকর্তারা বললেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে একটি করে চেয়ার খালি রাখা হয়েছে। মোট ৮৪ জন চিকিৎসক ও ৩৬ জন স্বাস্থ্য তথ্য কর্মকর্তা টেলিফোনে কোভিড রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত এই সেবা পাওয়া যায়।
কর্মকর্তারা জানান, ১৬২৬৩ নম্বরের কল ছাড়াও ৩৩৩ নম্বরে আসা কলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল সেন্টারে চলে আসে। এসব কলের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তা করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য তথ্য কর্মকর্তারা।
নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিদিনের শানাক্ত হওয়া রোগীর ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস)। এমআইএস প্রতিদিনের তালিকা পাঠিয়ে দেয় স্বাস্থ্য বাতায়নে। এরপর চিকিৎসকেরা রোগীদের মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে রোগীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। প্রত্যেক রোগীকে ১৪ দিনে কম পক্ষে চারবার ফোন করা হয়।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়। সিনোসিস আইটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৮ মার্চ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ৪৫৪টি কলে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে করোনা বিষয়ে সেবা দেওয়া হয়েছে ৭৮ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৩টি কলে। আর কোভিড-১৯ টেলিহেলথ সেন্টারের মাধ্যমে ১৮ জুন থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩৫ জন আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দেওয়া হয়।
কর্মকর্তারা জানান, করোনা রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়ার ব্যাপারেও সেন্টার থেকে সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দাফন ও কবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হচ্ছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সরকারের এই বড় উদ্যোগ ছাড়াও আরও কিছু প্রতিষ্ঠান করোনা রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছে। এর কিছু আছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। কিছু বড় হাসপাতালের নামকরা চিকিৎসকেরাও টেলিফোনে সেবা দিচ্ছেন।
সর্বোপরি চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চেম্বার বা বাসা থেকে করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন মুঠোফোনর মাধ্যমে। ভিডিও কলের মাধ্যমে রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। চিকিৎসক হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে ব্যবস্থাপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন—এমন ঘটনা স্বাভাবিক চর্চায় পরিণত হয়েছে। সেসব ব্যবস্থাপত্র ওষুধের দোকানে পাঠালে রোগী ঘরে বসে ওষুধ পাচ্ছেন।