নানা জটিলতায় প্রতিদিনই বেশ কিছু কেন্দ্রে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ থাকছে। কেন্দ্র বন্ধ থাকলে নমুনা সংগ্রহও কম হয়। এতে একেক দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম-বেশি হচ্ছে। আর প্রতি শুক্রবার সরকারি ও বেসরকারি অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৯৩টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৪টি এবং ঢাকার বাইরের ৩৯টি কেন্দ্র রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৪৭টি নমুনা। এর আগের দিন ১৩ হাজার ৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা) ৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২টি কেন্দ্রে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। এর মধ্যে ঢাকার ১৪টি এবং ঢাকার বাইরের ৮টি কেন্দ্র রয়েছে।
গত আট দিনের নমুনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) ২০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এক দিন করে পরীক্ষা বন্ধ ছিল এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪ থেকে ১৬। এক দিন ১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়নি। দুই দিন ৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
পরীক্ষা বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) গত জানুয়ারি থেকে দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরু করে। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। ৩০ মার্চ থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের আওতা বাড়ানো শুরু হয়। এরপর থেকে নতুন যুক্ত হওয়া ল্যাবরেটরিগুলোর অধিকাংশই বেসরকারি।
ল্যাব–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরীক্ষা বন্ধ থাকছে। ল্যাবরেটরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাঝেমধ্যে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। ল্যাব জীবাণুমুক্ত করতে দু-তিন দিন ল্যাব বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবার পিসিআর মেশিনে একসঙ্গে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ বেশি না হলে বেসরকারি ল্যাব পরীক্ষা বন্ধ রাখে।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত পিসিআর মেশিনে ত্রুটির জন্য গত ২৭ আগস্ট করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। ল্যাবের টেকনোলজিস্ট মো. জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফা পরীক্ষা করে অধিকাংশ ফল অকার্যকর আসে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ক্ষেত্রে একই ফল আসায় তাঁরা যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি ধরতে পারেন। ফরিদপুর মেডিকেলে পাঁচ দিন করোনা পরীক্ষা বন্ধ থাকে। মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর ১ সেপ্টেম্বর আবার পরীক্ষা শুরু হয়।
রাজধানীর পল্টনে অবস্থিত আল-জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় গত ১৮ আগস্ট। এরপর গত ১৯ দিনে ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ২২টি। অধিকাংশ দিনই এই কেন্দ্রে কোনো নমুনা পরীক্ষাই হয়নি। এ বিষয়ে আল-জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারীর ভাই ও প্রতিষ্ঠানটি দেখভালকারী আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নমুনা না পাওয়ায় পরীক্ষার সংখ্যা কম। পরীক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
গত ৩১ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) পিসিআর মেশিনে ত্রুটি দেখা যায়। এরপর দুই দিন নমুনা পরীক্ষা করার পরে আবারও ত্রুটি দেখা দেয়। পাঁচ দিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর ৮ আগস্ট আবার পরীক্ষা শুরু হয়।
ল্যাবরেটরি কক্ষের নকশায় ত্রুটির কারণে গত মে মাসে করোনার রোগীদের জন্য নির্ধারিত রাজধানীর মুগদা হাসপাতালের পরীক্ষাকেন্দ্রে টানা ১৯ দিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ ছিল। নতুন নকশায় ল্যাব প্রস্তুতের পর আবার পরীক্ষা শুরু হয়। এর আগে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ল্যাবে পাঁচ দিন নমুনা পরীক্ষা হয়নি। ল্যাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজেও কয়েক দিন নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ঢাকার ৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি পরীক্ষাকেন্দ৶ই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। বেসরকারি কেন্দ্রগুলোতে মাঝেমধ্যেই পরীক্ষা বন্ধ থাকছে। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান সেবা না দেয় বা প্রয়োজন না থাকে তাহলে সেগুলোর অনুমোদন বাতিল করা উচিত। শুধু নাম ব্যবহারের জন্য এগুলো রাখার মানে হয় না। এসব কেন্দ্রের অপব্যবহার হচ্ছে কি না, সেটিও দেখভাল করতে হবে।
আরও শনাক্ত ১৯৫০, মৃত্যু ৩৫
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ জনের। একই সময়ে মারা গেছেন ৩৫ জন। সব মিলিয়ে দেশে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৫৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়ে মোট মারা গেছেন ৪ হাজার ৪৪৭ জন। গতকাল শনিবার দেশের করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত কয়েক দিনের মতো গতকালও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার কম। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ সময় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৬১ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৮৫২ জন।