পাড়ার স্বস্তি ‘প্রজন্ম’

মহামারির অভিঘাতে কিছু মানুষ মুষড়ে পড়েন। কিছু মানুষ সেঁধিয়ে যান নিজের আপাত–সুরক্ষার চার দেয়ালে। আবার কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যান সময়ের বিপরীতে। নিজেকে, নিজের অন্তর্গত শক্তিকে আবিষ্কার করেন দুঃসময়ের আয়নায়। করোনাকালে মানবসেবায় এগিয়ে আসা এমনই কয়েকজন মানুষের গল্প নিয়ে আয়োজন।

চাচা এশরাকুল মজিদ (ডানে) ও ভাতিজা রেদওয়ান উল মজিদ (ছবিতে নেই) নিজ উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন দুটি কক্ষে ‘প্রজন্ম’ নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। গত বুধবার সকালে গাজীপুর মহানগরীর শহীদ নিয়ামত সড়কের মারিয়ালী এলাকায়।

গাজীপুর শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের মারিয়ালী এলাকার প্রয়াত জিয়াউল মজিদের বাড়ির নিচতলায় একটি দোকান ছিল। তাঁর পাঁচ ছেলে নানা পেশায় যুক্ত। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে তাঁর ছেলে এশরাকুল মজিদ (৫০) ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন বড় ভাই শফিকুল মজিদের ছেলে রেদওয়ান উল মজিদকে (৩৩)। চাচা-ভাতিজা মিলে দোকানটি বন্ধ করে সেখানে দুই কক্ষের একটি পাঠাগার গড়ে তোলেন।

উদ্যোক্তা এশরাকুল মজিদ বলেন, স্কুল-কলেজ বন্ধ। অফিস-আদালত এই খোলে, এই বন্ধ করে। মানুষজন ঘরবন্দী। এই সময়ে শিশু-কিশোরেরা থাকছে বাড়তি মানসিক চাপে। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পাড়ার লোকজন যাতে বই পড়ে সময় পার করতে পারে এবং এলাকাতেই একটা নিশ্বাস ফেলার পরিসর পায়, তার জন্যই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। পাঠাগারটির নাম ‘প্রজন্ম, একটি মননশীল পাঠাগার’। এশরাকুল মজিদ ঢাকায় একটি টেক্সটাইল কারখানার কর্মকর্তা। ভাতিজা রেদওয়ান ব্যবসা করেন।

জয়দেবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে লক্ষ্মীপুরা হয়ে মারিয়ালীর দিকে কয়েক কিলোমিটার গেলে চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়ি। ওই বাড়িতে করোনা শুরুর পরপরই গত বছরের ২৬ মার্চ এই পারিবারিক পাঠাগার চালু করা হয়। তাকে তাকে সাজানো কয়েক শ বই। আছে একটি পিয়ানো ও গিটার। কয়েকজন তরুণ পাঠক পছন্দমতো বই নিয়ে পড়ছেন। বই পড়তে আসা আবদুল্লাহ হিল দিদার বলেন, ‘বাসার কাছে বলে এখানে এসে বই পড়ি। বাসায়ও সবাই নিশ্চিন্তে থাকে। প্রায় সব ধরনের বই পাওয়া যায়। একটা আলাদা অনুভূতি হয় এখানে এসে পড়লে।’

গীতাঞ্জলি, শেষের কবিতা, হুমায়ূন আহমেদসমগ্র, মুক্তিযুদ্ধ ও শিশুদের গল্প, উপন্যাস, কবিতার পাশাপাশি আত্মজীবনী মিলিয়ে সাত শতাধিক বই আছে এই পাঠাগারে। রাখা আছে সংবাদপত্রও।

করোনার অলস সময়টাকে এলাকার শিশু-কিশোর ও তরুণদের জন্য অর্থবহ এবং সৃষ্টিশীল করে তুলতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান রেদওয়ান। লুৎফুর হুদা নামের একজন পাঠাগারটি সম্পর্কে বলেন, নিশ্চয়ই এটি ভালো কাজ। এটি শুধু সময় পার করা নয়, জ্ঞান আহরণও।

ইতিমধ্যে পাঠাগারটিতে সপরিবার এসেছেন এবং সদস্য ফরম পূরণ করছেন গাজীপুরের বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার পরিচালক (পরিকল্পনা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম। এসেছেন মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আফিয়া খাতুন, অধ্যাপক রতনচন্দ্র শীল, দীপ্তি রানী রায় ও প্রতিমা দত্ত।

গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, মনের আঁধার দূর করতে বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সময় তো তা আরও বেশি প্রয়োজন।