করোনাভাইরাস বদলে দিচ্ছে অনেক কিছুই। চোখের সামনে বদলে যাচ্ছে পরিবার। বদলে যাচ্ছে পারিবারিক জীবন। নিউইয়র্কে চোখের পলকে এমন বদলে যাওয়ার ঘটনা অহরহ। বহুজাতি গোষ্ঠীর এ নগরীতে বেদনার কাব্য এখন ঘরে ঘরে। পাশের ঘরে থাকা অভিবাসী কর্মজীবী পরিবার। কে শুনবে কার কান্না ! এরপরেও এ নগরীর মানুষ নিউইয়র্কার হিসেবে আপন হয়। ইয়াঙ্কি হ্যাট মাথায় দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখায় যৌথ হয়ে।
নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিরাও এসব বহুজাতির জনসমাজের অংশ। এ নগরীর আনন্দ বেদনায় সদা একাকার মানুষের কান্নার আওয়াজও একাকার হয়ে গেছে আজ। ব্রঙ্কসে বসবাস করেন লয়েড টরেস। দুই সপ্তাহ আগে মন চেয়েছিল মায়ের হাতে বানানো ফিলিপিনো স্যুপ খাবেন। মা ললিতা রান্না করতে, অন্যদের খাওয়াতে পছন্দ করতেন। নগরীর জ্যামাইকায় মায়ের সঙ্গে থাকেন ভাই লুইস। লুইসসহ মাকে নিয়ে লয়েড মোড়ের গ্রোসারিতে গিয়ে ফিলিপিনো স্যুপ তৈরির উপাদান কিনে ঘরে ফেরেন। কিন্তু ওই রাতের খাবারটিই যে মায়ের হাতে রান্না করা শেষ খাবার হবে, তা জানতেন না লয়েড।
কয়েক দিন পরেই মায়ের অসুস্থতা শুরু হয়। শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকলে ১ এপ্রিল প্রথমে লুইসকে এবং কয়েক ঘণ্টা পর মা ললিতাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৭ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে প্রথমে মায়ের মৃত্যুর খবর পান লয়েড। এর কিছুক্ষণ পর আসে ভাই লুইসের মৃত্যুর ফোন কল। করোনাভাইরাসে কেড়ে নিয়েছে এই পরিবারের দুটি প্রাণ। একদিনে দুই মৃত্যু নিতে পারছেন না লয়েড। বিলাপ করছেন।
কিছুদিন আগে বাবাকে হারানো লয়েড বলেন, মা-বাবা ফিলিপাইন থেকে অভিবাসী হয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। করোনার করুণ বলিতে মা ও ভাইকে হারিয়ে লয়েড ও তাঁর স্ত্রী অপেক্ষা করছেন। নিজেদের করোনাভাইরাস টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসলেই মা ও ভাইয়ের শেষকৃত্য করবেন।
১৩ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিউইয়র্কে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ রাজ্যের প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে একজন এখন করোনায় আক্রান্ত।