এক মাসের বেশি সময় পর দেশে দৈনিক করোনার সংক্রমণ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে করোনায় মৃত্যুও।
গতকাল সোমবার সকাল আটটা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ২ হাজার ৩২২ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত ৩০ এপ্রিলের পর এই প্রথম এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। করোনায় একদিনে মৃত্যুও এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত ৯ মে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৫৬ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হারও বেড়েছে।
এ সময় সবচেয়ে বেশি ৩৪৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ঢাকা মহানগরে। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী জেলায়।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ৩০ জনের মৃত্যু হয়। আর করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯৭০ জনের।
এ নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১৫ হাজার ২৮২। মোট মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ৯১৩ জনের। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০২ জন।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ১৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।
এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়। মার্চের প্রথমার্ধেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের ওপরে চলে যায়। বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত ২৬ মার্চের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনের মৃত্যু খবর দেওয়া হয়, সেখানে ১৯ এপ্রিলের বুলেটিনে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১২ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ওই দিনই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যা এখনো বহাল রয়েছে। এই বিধিনিষেধে মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে গত মাসের মাঝামাঝিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ‘লকডাউন’ ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে । ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা ও যাতায়াতে বিপুল লোকসমাগম দেখে জনস্বাস্থ্যবিদেরা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা করেছিল, ঈদের পর সংক্রমণ আবার বেড়ে যাবে। এদিকে ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়ছে। কিছু দিন ধরে সারা দেশেও করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে।