রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুত চুক্তি করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিবকে ২ মে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব।
চুক্তি সই ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে রাশিয়া থেকে করোনাপ্রতিরোধী ‘স্পুতনিক-ভি’ টিকা আনতে অন্তত এক মাস লেগে যেতে পারে। স্বাস্থ্যসচিবকে লেখা পররাষ্ট্রসচিবের চিঠি থেকে এ কথা জানা গেছে। রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত টিকা কেনার সিদ্ধান্ত সরকার নিলেও দুই দেশের মধ্যে প্রথমে সাপ্লাই অ্যাগ্রিমেন্ট বা সরবরাহ চুক্তি হতে হবে। এখনো দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়নি।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন দ্রুত এই চুক্তিতে সই করার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে ২ মে চিঠি দিয়েছিলেন। তাঁর চিঠিতে টিকা আনার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপের কথা উল্লেখ আছে, যেগুলো শেষ হওয়ার পরই রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করা যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রসচিবের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত স্পুতনিক-ভি আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ে আরডিআইএফ (ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অব রাশিয়া ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে চূড়ান্তভাবে সরবরাহ চুক্তি সই হওয়ার পর তা রাশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পাঠাবেন রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনাতভ। এর ভিত্তিতে আরডিআইএফ তখন টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে টিকা উৎপাদনের নির্দেশ দেবে। সাধারণত চুক্তি সই হওয়ার এক মাসের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ হাজার ডোজ টিকার প্রথম চালান তৈরি করা সম্ভব। পরে টিকার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে।
রাশিয়া থেকে টিকা পেতে আরও কয়েকটি ধাপ পার হতে হবে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে টিকার অগ্রিম মূল্য পরিশোধ। এসব কাজেও কয়েক দিন সময় লাগে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গত ২৭ এপ্রিলে রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে এই টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে।
সরকার বিশ্বব্যাংকের টাকায় রাশিয়া থেকে টিকা আনার পরিকল্পনা করছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দেশে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ নামের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন এ প্রকল্পের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে জানান, গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের জন্য (মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত) বরাদ্দ আছে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে টিকা কেনার জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে টিকার প্রস্তাব এলে আমরা বিশ্বব্যাংকে সেই প্রস্তাব পাঠাব। টিকা কেনার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি থেকে রাশিয়ার টিকা কেনার জন্য বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আমরা পাইনি।’
স্বাস্থ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে পররাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকারকে টিকার (রাশিয়ার) প্রস্তুত করা প্রথম চালানের মূল্য আগে পরিশোধ করতে হয়। অগ্রিম মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে এবং ‘স্পেশিফিকেশন অ্যাপ্রুভাল’ (নমুনা অনুমোদন) হওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে টিকার প্রথম চালান বাংলাদেশে পৌঁছানো সম্ভব হবে। প্রতি চালানে বা ফ্লাইটে এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ টিকা বহন করা সম্ভব হবে বলে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আরডিআইএফ জানিয়েছে।
এ অবস্থায় রাশিয়ার সঙ্গে সরবরাহ চুক্তি জরুরি ভিত্তিতে করার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সরবরাহ চুক্তি হয়নি বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
গত ২১ এপ্রিল ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি উৎস ও সংগ্রহসংক্রান্ত কোর কমিটি’র আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি টিকার দাম ১০ থেকে ২৭ ডলার। এই টিকার কার্যকারিতা ৯১ দশমিক ৬ শতাংশ।
রাশিয়া থেকে টিকা আমদানির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তাগাদা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট গেলেই আটকে থাকে, সেটা সব ক্ষেত্রেই। আমরা সব অ্যারেঞ্জমেন্ট (ব্যবস্থা) করে দিয়েছি, এখন এটা ফসকে যাবে যদি দ্রুত চুক্তি না হয়।’