মৃত্যুও বাড়ছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি কম। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩,১২৩ জন রোগী।
দেশে গত ডিসেম্বর মাসে সাড়ে ৯ হাজারের কম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। জানুয়ারি মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই লক্ষাধিক ব্যক্তির। এক মাসের ব্যবধানে করোনা রোগী বেড়েছে ২৩ গুণ। এ সময়ে করোনায় মৃত্যুও বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে ১৩ হাজার ১৫৪ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ১৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ এক লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৭ দিনে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারিতে এটি দ্রুততম এক লাখ রোগী শনাক্তের রেকর্ড।
দেশে কিছুদিন ধরে যে হারে নতুন রোগী বাড়ছে, তাতে সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংক্রমণ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই দফায় সংক্রমণ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। কবে নাগাদ এটি সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে স্থিতিশীল হবে এবং এরপর আবার নিম্নমুখী হবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
দেশে গত বছরের ৩১ আগস্ট মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর প্রায় সাড়ে তিন মাস করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। বর্তমানে করোনার অতিসংক্রামক ধরন অমিক্রনের দাপট চলছে। করোনার এই ধরনের বিস্তারে মাসখানেকের মধ্যেই দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে।
প্রায় সাড়ে চার মাস পর গত ১২ জানুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়ায়। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে নতুন রোগী ও শনাক্তের হার আবারও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ থেকে ১৭ লাখে পৌঁছায় মাত্র ১৩ দিনে।
গত বছরের জুন-জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার সময় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ আকার ধারণ করেছিল। সে সময় (২৯ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট) মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখে পৌঁছাতেও সময় লেগেছিল ৭ দিন।
গত বছরের আগস্টে সংক্রমণ কমতে থাকে। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর—এই চার মাসে করোনা শনাক্ত হয় ৮৪ হাজার ৯২১ জনের। অর্থাৎ চার মাসে যত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল, তার আড়াই গুণ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে জানুয়ারি মাসে।
দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে মৃত্যুও বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে টানা তিন দিন করোনায় ৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হলো। গত জানুয়ারি মাসে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩২২ জনের। ডিসেম্বরে করোনায় মারা গিয়েছিলেন ৯১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৪২৫ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৪ জন। মৃত ও সুস্থদের বাদে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৮ জন। দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এত চিকিৎসাধীন রোগী আগে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেও দেশে চিকিৎসাধীন রোগী ছিল সাড়ে আট হাজার। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার মাস শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে এসেছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে দেশে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কম ভর্তি হচ্ছেন। গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় ২ হাজার ৬২০ জন এবং আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যায় ৫০৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। অর্থাৎ মোট চিকিৎসাধীন রোগীর প্রায় সাড়ে ৯৮ শতাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।