করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী চার মাসের মধ্যে দুই কোটি টিকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য বড় ভরসা এখন ‘কোভ্যাক্স’। আগামী জুন মাসে কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়ার আশা করছে সরকার। তবে জুনে কত ডোজ টিকা পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করে এখনো বলতে পারছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দেশের ২০ শতাংশ জনগণের জন্য ৬ কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা পাবে সরকার। এর মধ্যে শুরুতে ১ কোটি ৯ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, করোনা প্রতিরোধে দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে বৈশ্বিক উদ্যোগ হলো কোভ্যাক্স।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানায়, গত ২৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ টিকাসংক্রান্ত একটি জরুরি সভা হয়। ওই সভাতেই আগামী চার মাসের জন্য টিকা সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বলা হয়, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করবে। এ ছাড়া টিকার মূল্যের বিষয়টি নিয়ে দর-কষাকষি বা আলোচনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করবে। এই কমিটিতে আরও থাকবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন মহাপরিচালক, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পর্যায়ের একজন প্রতিনিধি।
ওই সভার দুই দিন পর ২৯ এপ্রিল টিকা সংগ্রহ নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উদ্যোগে আরেকটি বৈঠক হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি ও প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন করে প্রথম ডোজ টিকাদান কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। অথচ দেশে সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় টিকাদান কার্যক্রম কেবল অব্যাহত রাখা নয়, বরং আরও জোরদার করা জরুরি এবং বহুল প্রত্যাশিত ছিল। বৈঠকে বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে বলা হয়, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে সেরাম ইনস্টিউট থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ওই বৈঠকে ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটি গঠন’-এর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের এই কমিটি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান ধারা ও ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণের আলোকে টিকার চাহিদা নিরূপণ করবে। টিকার মূল্য, প্রাপ্যতা, কার্যকারিতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত টিকার সম্ভাব্য সব উৎস থেকে বাংলাদেশের জন্য উপযোগী টিকা নির্বাচন করবে। এই কমিটি প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার পর্যন্ত দেশে ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭১৯ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৩০ লাখ ২৩ হাজার ১৬৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এ বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথম জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এই টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত কোভিশিল্ড। দেশে এই টিকা এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে। আর গত ২৭ এপ্রিলে রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক ভি অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে। সবশেষ ২৯ এপ্রিল চীনের প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মার তৈরি এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চীনের টিকাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ৩৫টি দেশে।
সব মিলিয়ে সরকার করোনার তিনটি টিকার অনুমোদন দিল। এর মধ্যে দুটি টিকা দেশে উৎপাদনের কথা আলোচনায় আছে।
ভারত থেকে কেনা ও উপহার হিসেবে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩ লাখ টিকা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চুক্তি হয়েছিল তিন কোটি টিকার। গত ডিসেম্বরে সেরামের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে সব টিকা আসার কথা।
এদিকে চীন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে যে পাঁচ লাখ টিকা দিচ্ছে, তা ১০ মের মধ্যে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীন থেকে আরও টিকা কেনার জন্যও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। চার-পাঁচ কোটি ডোজ হলেও নেওয়া হবে। রাশিয়া থেকে টিকা আনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।