চট্টগ্রামে মৃত্যু বাড়ার মধ্যে হাসপাতালে শয্যাসংকট

শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা মাকে চিকিৎসা করানোর জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন সন্তানেরা। সেখানে জরুরি বিভাগের সামনে অপেক্ষা করার সময় তিনি অচেতন হয়ে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর দুই মেয়ে। সোমবার দুপুর ১২টায়।
ছবি: সৌরভ দাশ

রাঙ্গুনিয়ার ষাটোর্ধ্ব আবুল হাশেম কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পর সোমবার দুপুরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে করোনা ওয়ার্ডে বিছানা দেওয়া হয় মেঝেতে। হাশেমের স্বজন আজহার বলেন, হৃদ্‌রোগের সমস্যা রয়েছে তাঁর চাচার। জ্বরও ছিল। ওয়ার্ড থেকে কোনো রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়া হলে সেখানে চাচাকে শয্যা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

হাশেমের মতো অন্তত ২০ করোনা রোগীকে প্রতিদিন এই হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ কারণে কিছুটা সুস্থ হলেই রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তুলনামূলক খারাপ রোগীদের জায়গা দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে নগরীর জেনারেল হাসপাতালেও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের জায়গা দিতে কিছুটা সুস্থ হলেই রোগীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে নগরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি নেই বললেই চলে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা একটি শয্যার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরছেন। সাধারণ শয্যার পাশাপাশি আইসিইউ শয্যার সংকটও চলছে চট্টগ্রামে।

এমন এক সময়ে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে, যখন সেখানে এই ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুও বেড়েছে। আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন এ বিভাগে করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ৪০ জনের। এর আগের বেশ কিছুদিন ধরেই চট্টগ্রাম বিভাগে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা এর আশপাশেই ছিল।

গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় করোনায় ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০ জুলাই রেকর্ড ১৫ জনের মৃত্যু হয়। মহামারি শুরুর পর এটাই ছিল এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আজ সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মারা যায় ১২ জন, আগের দিন মারা যায় ১১ জন। তার আগের দুই দিন শনি ও শুক্রবার ৬ জন করে মৃত্যুর খবর আসে।

চট্টগ্রাম নগরীতে আজ ১ হাজার ৩৫০ রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া আইসিইউতে আছেন আরও ১২১ জন। এর মধ্যে ১৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে রোগী আছেন ১৬০ জন। অন্যদিকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী আছে ২৮৮ জন।

জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সমন্বয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, কোনো ধরনের শয্যা খালি নেই। ১২ দিন হলে এবং নতুন উপসর্গ দেখা না দিলে বা অক্সিজেন না লাগলে রোগীদের ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন রোগী ভর্তি করাতে হচ্ছে।

জানা গেছে, আগে কোভিড রোগীদের ১৪ দিন পর আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে দেখা হতো। কোভিড নেগেটিভ এলে ছেড়ে দেওয়া হতো। এখন ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন না লাগলে রোগী ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামে করোনার ডেলটা ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। চিকিৎসার জন্য অসুস্থ শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। সোমবার দুপুর ১২টায় জরুরি বিভাগের সামনে।

নুরুল হাসান নামের একজন রোগীর সঙ্গে আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে কথা হয়। দুদিন আগে তিনি এই ওয়ার্ড থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আজ ফলোআপে আসেন।

নুরুল হাসান বলেন, ‘আমি তিন দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। অক্সিজেন লেগেছিল। মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাসায় গিয়েছি। এখনো নেগেটিভ আসেনি। কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে। তাই আবার দেখাতে এসেছি। ওয়ার্ডের পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমার সামনে পাঁচ–ছয়জন মারা গেছেন।’

এই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এখন ৩০০ রোগী পর্যন্ত সেবা দিচ্ছি। ওয়ার্ডে জায়গা নেই। রোগী আসছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রোগী ফেরত দিতে পারি না। তাই সবাইকে ভর্তি করতে হচ্ছে।’ সেখানে ১০০ শয্যার আরেকটি কোভিড ওয়ার্ড চালু করার কথা বলে জানান তিনি।