হাত ধুয়ে নিন, করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকুন—এ স্লোগান এখন জনপ্রিয়। সবার বাড়িতেই মার্শাল’ল। আজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতেই চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হুকুম জারি করেছেন, যে লন্ড্রি ঘরের মধ্যে কাপড় ছেড়ে, হাত–মুখ ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে তবেই ঘরে ঢোকা যাবে। নিজের জন্য, পরিবারের সবার জন্য এই নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হয়নি। না হলে হয়তো বিদ্রোহী আমজনতার মতো ‘আমি বিদ্রোহী বীর...’ বলে একটা হুংকার দেওয়া যেত!
এই যে হাত ধোয়া, এটা কখন ধোব, কীভাবে ধোব?
কখন হাত ধুতে হবে
১.
বাড়ির বাইরে থেকে ফিরলে (সে যেকোনো জায়গা থেকেই হোক না কেন, যত অল্প সময় হোক না কেন)।
২.
বাথরুম, কিংবা টয়লেট থেকে বের হওয়ার আগে, সেটা নিজের হোক কিংবা পাবলিকের, প্রতিবার হাত ধুতে হবে সাবান দিয়ে।
৩.
যে কারও সঙ্গে হাত মেলানো বা কোলাকুলি করার পর (যদি এখনো কেউ এটার চর্চা করে থাকেন)।
৪.
খাবার রান্নার আগে, পরে ও রান্না চলাকালীন, বিশেষ করে কাঁচা খাবারে হাত দিলে।
৫.
খাবার খাওয়া শুরুর আগে ও শেষেও ধুতে হবে। যদি–না চামুচে খাওয়া হয়, সেটা ভিন্ন কথা।
৬.
অসুস্থ কাউকে সেবা দিলে, বিশেষ করে যাঁরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, কিংবা কোনো কারণে বমি করছেন।
৭.
শরীরে কোনো কাটা অংশে অথবা ক্ষত স্থানে হাত দিলে, চিকিৎসা দিলে
৮.
শিশুর ডায়াপার বদলালে, কিংবা পায়খানার পর তাকে পরিষ্কার করে দিলে।
৯.
নাক ঝাড়লে, হাতে কাশি দিলে, কিংবা হাঁচি দিলে।
১০.
পোষা প্রাণীর গায়ে হাত দিলে বা পোষা প্রাণী পরিষ্কার করলে।
১১.
পোষা প্রাণীর খাবারে হাত দিলে।
১২.
যেকোনো ময়লা বা আবর্জনায় স্পর্শ লাগলে।
১৩.
নিজের বা অপরের জুতোয় হাত দিলে।
এবং
যেকোনো পাবলিক কম্পিউটারে হাত দিলে, নিজের নয় এমন যেকোনো টেবিল বা যেকোনো বস্তুর ওপরে স্পর্শ লাগলে, অন্য কারও ফোনে হাত দিলে, টাকা কিংবা কয়েনে হাত দিলে, দরজার হাতল স্পর্শ করলে।
হাত কতক্ষণ ধোবেন?
কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড। সময়টা খুব বেশি মনে হচ্ছে? আপনার খুব কাছের মানুষের জন্য ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ কলিটি দুবার আওড়ান। মনে প্রশান্তি আসবে, মুখে হাসি ফুটবে, হাত ধোয়ার সময়টুকুও আনন্দে পার হবে।
স্যানিটাইজার না সাবান?
সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া সবচেয়ে ভালো। এর কোনো কিন্তু নেই।
যেসব স্যানিটাইজারে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে, (এদের অ্যালকোহল বেসড স্যানিটাইজার বলা হয়) সেগুলো জীবাণু ও ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করে। স্যানিটাইজার তখন ব্যবহার করবেন, যখন হাতের কাছে সাবান ও পানি নেই। হাতের কাছে পকেট সাইজ স্যানিটাইজার রাখুন, গণপরিবহনে উঠলে বা পাবলিক প্লেসে কোথাও বসলে, রেস্তোরাঁয়, চার্চে, মসজিদে, মন্দিরে, জমায়েত হয় এমন যেকোনো পরিস্থিতে একবার নিজের হাত জীবাণুমুক্ত করে নিন। একটা বড় ফোঁটা নিয়ে হাতের দুই পিঠ, আঙুলের ফাঁকে এবং আঙুলের ডগা পর্যন্ত ঘষে নিন।
যেভাবে হাত ধোবেন
হাত ভেজানো: ট্যাপের নিচে হাত দিয়ে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে হাত ভিজিয়ে নিন। কখনো বেসিনে বা অন্য পাত্রে জমানো পানিতে হাত ধোবেন না, অন্য কেউ ব্যবহার করলে তো অবশ্যই নয়।
ফেনা তুলুন: অন্যের সাবান মনে করে (নিজের মনে করলে কম ব্যবহার হতে পারে) যথেষ্ট পরিমাণ সাবান নিয়ে ডলে ফেনা তুলুন।
ঘষুন: হাতের তালু, উল্টা পিঠ, আঙুলের ডগা ভালো করে ঘষুন।
ধুয়ে ফেলুন: ট্যাপের পানির নিচে হাত নিয়ে আলতো করে হাত ধুয়ে ফেলুন।
শুকিয়ে নিন: হাত মুছে শুকিয়ে ফেলুন। পেপার টাওয়েল ব্যবহার সুবিধাজনক কারণ, এতে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে না। (যাঁরা বাংলাদেশের হোটেল–রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে, হাত ধুয়ে ওখানকার তোয়ালেতে হাত মুছেছেন, তাঁরা জানেন সেগুলো কী পরিমাণ ধবধবে পরিষ্কার! অন্যান্য পাবলিক প্লেসে তোয়ালে যতই সুন্দর লাগুক না কেন, জীবাণু ছড়ানোতে তারা একই প্রজাতির! যদি এয়ার ড্রায়ার থাকে, সেটাও যেকোনো তোয়ালের চেয়ে ভালো।
ভালো কথা, হাত তো শুকিয়েছেন, এখন পানির ট্যাপ বন্ধ হবে কীভাবে? যাদের আরও ‘দুটো হাত’ আছে, তাদের কথা থাক। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ, যাদের সারা জীবন দুটো হাত থেকেছে, কখনো কখনো অন্যের ‘হাত’ হতে হয়েছে, তাদের উচিত হবে পেপার দিয়ে ট্যাপ বন্ধ করা।
ঝুঁকি এড়াবেন যেভাবে
দরজার হাতল, কমোডের ফ্লাশের হাতল, পানির ট্যাপ এড়িয়ে চলুন হাত ধোয়ার পরে। জামার হাতা, পেপার টাওয়েল, কনুই, স্কার্ফ কিংবা ওড়না, কিংবা ডিসপোসেবল গ্লাভস (পুরোনো দিনের দস্তানা রাজসিক হলেও, জীবাণু ছড়াবে বেশি, ব্যবহার আপনার আত্মহত্যার উদগ্র বাসনার সমানুপাতিক) ব্যবহার করুন।
সবশেষে
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন ভালো কথা। কিন্তু ওটা শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। কেউ খেয়ে ফেললে মাতাল হবে ভাবছেন? তা নয়। শিশুর জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে।