বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় প্রতিদিন প্রবাসী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর খবর আসছিল। তবে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে প্রবাসীদের মৃত্যুর হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে থাকে সৌদি আরব। সেখানে অবস্থান করা প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ পরিস্থিতি কেমন, তা বোঝার জন্য একটি তথ্যই যথেষ্ট। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ মাসে শুধু সৌদি আরবেই মারা গেছেন ১ হাজার ২২৮ জন বাংলাদেশি।
এখন পর্যন্ত সৌদি আরবসহ বিশ্বের ২৩টি দেশে ২ হাজার ৭২৯ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে করোনায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশের দূতাবাস ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এসব সূত্র বলছে, মাঝখানে বেশ কিছুদিন মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ কম ছিল। কিন্তু মাসখানেক ধরে আবার তা বাড়ছে।
দেশের বাইরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর (যুক্তরাষ্ট্র থেকে) পাওয়া যায় গত বছরের ১৮ মার্চ। কাকতালীয়ভাবে ওই দিনই বাংলাদেশেও প্রথম কারও মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবে ১ হাজার ২২৮, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৬৫, কুয়েতে ১০৭, ওমানে ৭০, কাতারে ৩৫ ও বাহরাইনে ৩১ জন বাংলাদেশি করোনায় মারা গেছেন। তাঁরা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যেরই আরেকটি দেশ জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ চলবে। তিনি জানান, করোনায় জর্ডানে এখন পর্যন্ত ১৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, করোনার সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৪৫, যুক্তরাজ্যে ৪১২, ইতালিতে ৩৫, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০, লেবাননে ১৫, কানাডায় ৯, সুইডেনে ৮, ফ্রান্স ও স্পেনে ৭ জন করে, বেলজিয়ামে ৩, পর্তুগালে ২ এবং ভারত, মালদ্বীপ, কেনিয়া, লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে মোট ৯৭৮ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন করোনায়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যেসব প্রবাসী করোনার সংক্রমণে মারা গেছেন তাঁদের অধিকাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিক।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী কর্মীদের সহযোগিতার জন্য ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করোনা সেল গঠন করা হয়। মূলত প্রবাসীদের চাকরির সুরক্ষা ও তাঁদের কল্যাণের জন্য কূটনৈতিক কার্যক্রম সমন্বয় করতে ওই সেল গঠন করা হয়। পাশাপাশি ওই সেল বাংলাদেশে আটকে পড়া বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফেরত পাঠানো এবং বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের লোকজনকে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করেছে।
ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ইতালির স্বাস্থ্যব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত হওয়ায় প্রবাসী কর্মীদের চিকিৎসাসেবার বিষয়টি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে। এর ফলে তাঁদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে ইতালির সরকার।