করোনায় মৃত্যু আবার ১০০ ছাড়াল

বিধিনিষেধ আরোপে মাঝে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমলেও কিছুদিন ধরে আবার বাড়ছে
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এটি এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। এর থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত ১৯ এপ্রিল, সেদিন মারা যান ১১২ জন।

আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৭ হাজার ৬৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২২। গত ৬৯ দিনের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। গত ১৭ এপ্রিল শনাক্তের হার ছিল ২১ দশমিক ৪৬।

দেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮০৪। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৯৭৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৭৬ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৭৫ জন ও নারী ৩৩ জন। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এরপর ঢাকা বিভাগে ২৫ জন, চট্টগ্রামে ২৩, রাজশাহীতে ১৬, রংপুরে ১০, ময়মনসিংহে ৪ ও সিলেটে ৩ জনের মৃত্যু হয়। তবে এ সময়ে বরিশাল বিভাগে কারও মৃত্যু হয়নি।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার করোনায় ৮১ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৬ হাজার ৫৮ জনের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। তারপর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। গত বছরের শেষ দিকে এসে সংক্রমণ কমতে থাকে।

দেশে এ বছরের মার্চ থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু দেশে এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি এপ্রিলের মতো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। ভারত সীমান্তবর্তী ১৫টি জেলায় রোগী দ্রুত বাড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে ২২ জুন থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই সাত জেলা হলো মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ।

কিন্তু এরপর সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলায় সারা দেশে কমপক্ষে ১৪ দিন সম্পূর্ণ ‘শাটডাউন’ করতে করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছে। এটিকে যৌক্তিক বলে মনে করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, সরকারেরও এ ধরনের প্রস্তুতি আছে। যেকোনো সময় সরকার তা ঘোষণা দেবে।