সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও দেখলাম—কক্সবাজারে ডলফিনগুলো কী সুন্দর করে খেলছে। স্থানীয় লোকজনের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছ, গত ৩০ বছরে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। দেখা যাবেই-বা কীভাবে, আমরা মানুষেরা ২৪ ঘণ্টাই যে দখল করে রেখেছি সৈকত। ময়লা আর আবর্জনা দিয়ে ভরে রেখেছি। করোনার বিরতিতে এখন কত পরিষ্কার পানি। তার মধ্যে খেলছে ডলফিনের দল, মনের আনন্দে করছে নাচানাচি। আমাদেরও জানান দিয়ে যাচ্ছে, এ সৈকত আসলে তাদেরই—আমরা জবরদখল করে ওদের অধিকার হরণ করছি।
সারা বিশ্বে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, বন্য প্রাণীরা শহরজুড়ে অবাধে বিচরণ করছে। যেন বলছে, এত দিন তো আমাদের বন্দী করে রাখতে চিড়িয়াখানায়; এবার নিজেরা কিছুদিন বন্দী থাকো, কেমন লাগে দেখো! আমরা একটু মুক্ত হাওয়া আস্বাদন করি।
বিশ্বজুড়ে পর্যটনের নামে, যা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের উৎস, বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল হুমকির মুখে এখন। প্রতিবছর বিলুপ্ত হচ্ছে অসংখ্য প্রজাতি। আমরা মানুষেরা এতটাই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছি যে মনেই থাকে না, এ পৃথিবী শুধু আমাদের না, এসব প্রাণীদেরও, প্রকৃতিরও!
করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র এখন বন্ধ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন এই খাত। এরই ফাঁকে অবসর পেয়েছে সেসব স্থান, সেখানের বাসিন্দারা। পরিবেশদূষণ স্মরণকালের সবচেয়ে নিম্নে অবস্থান করছে। বেইজিংয়ের মতো দূষিত শহরেও এখন মুক্ত নীল আকাশ দেখা যায়। কলকারখানার বর্জ্য, পেট্রল পোড়ানো ধোঁয়া—এসব থেকে অনেকটা মুক্তি পেয়েছে পৃথিবী!
করোনার বিরতিতে পৃথিবী আস্তে আস্তে নিজেকে সারিয়ে তুলছে। এত দিনের গভীর ক্ষত সারাতে অবশ্য অনেক সময়ের প্রয়োজন, অনেক অনেক ক্ষেত্রে সম্ভবও না, তারপরও পৃথিবী আমাদের আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—একটু যদি আমরা কম স্বেচ্ছাচারী হই, তাহলে পৃথিবী আরও অনেক বেশি ভালো থাকবে, একটু যদি অবসর দিই পৃথিবী নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে, নিরাময় করতে পারে গভীর সব ক্ষত! এতে আখেরে লাভ আমাদেরই। এ পৃথিবী ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকব। জলবায়ু পরিবর্তনের নানান হুমকি থেকে মুক্তি পাব।
করোনা আমাদের থেকে অনেক বেশি নিয়ে গেলেও অনেক কিছু শিখিয়েও যাচ্ছে। এটাই হয়তো প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ। আমাদের নিষ্ঠুরতা যদি তাও একটু কমে। যদিও এসব কথা খুব একটা ফলপ্রসূ না—যেখানে সারা বিশ্বে ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কতিপয় অন্ধের দল, যারা টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না!
*লেখক: এমডি নিউরোলজি (অধ্যয়নরত), ইয়াংজো ইউনিভার্সিটি, জিয়াংসু, চীন