দেশে প্রায় চার মাস পর এক দিনে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি ও নতুন উপধরন শনাক্ত হওয়ায় সংক্রমণের নতুন ঢেউ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক সাদ্দাম হোসাইন।
প্রথম আলো: দেশে করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি কী করোনার নতুন ঢেউয়ের শুরু?
বে-নজির আহমেদ: এখন যে অবস্থা চলছে, তাকে আমরা করোনা সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ বলতে পারি। এখন সংক্রমণের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে বলা যায়, আমরা ইতিমধ্যেই চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশ করেছি। এখন দেখার বিষয় এ ঢেউ কত দূর পর্যন্ত যায়।
প্রথম আলো: এ অবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করণীয় কী?
বে-নজির আহমেদ: এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি সংক্রমণের ধরন বিশ্লেষণ করা। বিশ্লেষণে কয়েকটি বিষয় থাকবে। প্রথমত, বের করতে হবে করোনার কোন ধরনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ ধরন সম্পর্কে জানতে পারলে জানা যাবে, এটি আমাদের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি কতটা তীব্র হতে পারে, কত দ্রুত এটি ছড়াবে। এসব জানলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
দ্বিতীয়ত, যাঁরা এখন আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের তথ্যও বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশ্লেষণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বয়স, টিকা নেওয়ার অবস্থা ইত্যাদি জানতে হবে। যদি দেখা যায়, যাঁরা এখন আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই টিকা নেননি অথবা এক বা দুই ডোজ নিয়েছিলেন কিংবা বুস্টার ডোজ নেননি, তাহলে টিকা নেওয়ার প্রতি জোর দিতে হবে।
মানুষকে টিকা নিতে উৎসাহিত করতে হবে। আবার যদি দেখা যায়, বুস্টার নেওয়ার পরও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে ‘আইসোলেশন’ ও মাস্ক পরার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, বুস্টার নেওয়ার পরও কেউ আক্রান্ত হলে বুঝতে হবে করোনার বর্তমান ধরনের ক্ষেত্রে টিকা কার্যকর হচ্ছে না।
তৃতীয়ত, এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণও করতে হবে। যদি দেখা যায়, ঢাকায় মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তবে ঢাকাকেন্দ্রিক গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি হবে। তবে দেশের অন্য অংশকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রথম আলো: এসব বিশ্লেষণে কত দিন সময় লাগতে পারে?
বে-নজির আহমেদ: বর্তমান ধরন, আক্রান্ত মানুষের তথ্যসহ অন্যান্য বিশ্লেষণ এক দিনেই করা সম্ভব। আমরা ইতিমধ্যেই দেরি করে ফেলেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিশ্লেষণের কাজ শেষ করতে হবে। বিশ্লেষণ শেষে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
বিশ্লেষণের পাশাপাশি ধরনের উৎসও খুঁজে বের করতে হবে। দেখতে হবে, যে ধরনে মানুষ এখন আক্রান্ত হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশেই আছে নাকি বহির্বিশ্ব থেকে এসেছে।
প্রথম আলো: বহির্বিশ্বে এখন মানুষ কোন ধরনে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে?
বে-নজির আহমেদ: বহির্বিশ্বে মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে অমিক্রনের একটি উপধরনে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেশে ওই উপধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, ভারতে অমিক্রনের ওই উপধরনে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।
প্রথম আলো: করোনা পরিস্থিতি কী আবার খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে?
বে-নজির আহমেদ: দ্রুত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী ঈদের (ঈদুল আজহা) সময় করোনা সংক্রমণের হার চার-পাঁচ গুণ বাড়তে পারে।