মানবদেহ থেকে মানবদেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে শুরুর দিকে চীন বিশ্বের কাছে মিথ্যাচার করেছে। সেখানে করোনার প্রথম তথ্য ফাঁসকারী ব্যক্তিকে গুম করা হয়েছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য ভাইরাসের নমুনা হস্তান্তরের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা।
'ফাইভ আইজ' নামের গোয়েন্দা জোটের ফাঁস হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে। ১৫ পৃষ্ঠার বিস্ফোরক প্রতিবেদনে ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে, কথিত পাঁচ গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সদস্য বিশ্বাস করেন, ভাইরাসটির মূলত উৎপত্তি হয়েছে 'উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি' থেকে। সেখান থেকে এটি চীন হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
অস্ট্রেলীয় দৈনিক 'টেলিগ্রাফ'-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দাবি প্রথম দিকে 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ চীন সরকারের দাবি, ভাইরাসটির উৎপত্তি হয়েছে স্থানীয় 'মাংসের বাজার' থেকে। সরকার এই দাবির পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছিল।
এদিকে, ঊর্ধ্বতন একটি গোয়েন্দা সূত্র ফক্স নিউজকে বলেছে, কোভিড-১৯-এর উৎপত্তি উহানের একটি গবেষণাগার থেকে হয়েছে বলে সিংহভাগ গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে। তবে এটা ধারণা করা হচ্ছে, দুর্ঘটনাক্রমে গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল।
নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র—এই পাঁচটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত 'ফাইভ আইজ'। সংস্থাটির মতে, চীন করোনাভাইরাস নিয়ে নীতিভ্রষ্ট হ্যান্ডলিং করে 'আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতার মারাত্মক লঙ্ঘন' করেছে।
প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, চীন কীভাবে প্রাদুর্ভাবটিকে বহির্বিশ্বের কাছে গুরুত্বহীন বলেছিল। কীভাবে রোগের চিহ্নগুলো স্থানীয়ভাবে লুকিয়ে ফেলেছিল। এতে দাবি করা হয়, কাঁচা মাংসের বাজার করোনার উৎপত্তি দাবি করে বাজারগুলোকে ব্লিচ করেছিল। তারা এই ভাইরাসের উপসর্গহীন বাহকদের বর্ধিত সংখ্যাকে সেন্সর করেছিল। নমুনা চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অনুরোধ রাখতে চীন অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, বেইজিং ডিসেম্বরের দিকেই ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনগুলো সেন্সর করা শুরু করেছিল, যাতে ভাইরাসটির ব্যাপারে অনলাইনে অবাধে তথ্য না পাওয়া যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ সত্ত্বেও চীনের সঙ্গে এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছিল, মানব থেকে মানবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয় না।
সমন্বিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনের দাবি, ভাইরাসটির মানবদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণের প্রমাণ চীনের কাছে ডিসেম্বরের প্রথম দিক থেকেই ছিল। এতত্সত্ত্বেও তারা ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ভাইরাসটি সম্পর্কে কিছু জানায়নি। এরপর তারা সংক্রমণের সত্যটি স্বীকার করতে শুরু করে।
প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, চীন তার দেশে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অথচ একই সময়ে বিশ্বকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন নেই বলে প্রচার করতে থাকে।