দেশে করোনার সংক্রমনে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ছাড়িয়েছিল। সর্বশেষ এক লাখের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৭ দিনে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারীতে এটি দ্বিতীয়বারের মতো এক সপ্তাহে এক লাখ রোগী শনাক্তের ঘটনা। গত বছর ২৯ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সাত দিনে লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। প্রথম এক লাখ রোগী শনাক্তে সময় লেগেছিল সাড়ে তিন মাস। এরপর প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই মহামারিতে সংক্রমণ চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে।
গত বছরের ৩১ আগস্ট মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়েছিল। এরপর প্রায় সাড়ে তিন মাস করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবার রোগী বাড়তে শুরু করে। প্রায় সাড়ে চার মাস পর গত ১২ জানুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়ায়।
চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে নতুন রোগী ও শনাক্তের হার আবারও সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৬ থেকে ১৭ লাখে পৌঁছায় মাত্র ১৩ দিনে। আর এর পরের লাখ হতে সময় লাগে মাত্র সাত দিন।
গত বছরের জুন-জুলাইয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ বাড়ার সময় পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ আকার ধারণ করেছিল। সে সময়ও (২৯ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট) মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১২ থেকে ১৩ লাখে পৌঁছাতেও সময় লেগেছিল ৭ দিন। সর্বশেষ এক লাখ রোগী শনাক্তের আগে এটি ছিল দ্রুততম লাখ রোগী শনাক্তের ঘটনা।
দেশে কিছুদিন ধরে যে হারে নতুন রোগী বাড়ছে, তাতে সংক্রমণের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন।
তিন মাসের বেশি সময় পরে গত ৬ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত রোগী হাজার ছাড়ায়। তার চার দিনের মাথায় ১০ জানুয়ারি শনাক্ত রোগী দুই হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর ২৫ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত রোগী ১৬ হাজার ছাড়ায়। এখন পর্যন্ত এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয় সেদিন।
গত ৭ দিন ধরে দৈনিক ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই দফায় সংক্রমণ এখনো ঊর্ধ্বমুখী। কবে নাগাদ এটি সর্বোচ্চ চূড়ায় গিয়ে স্থিতিশীল হবে এবং এরপর আবার নিম্নমুখী হবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
দেশে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সুস্থ ও মৃতদের (সুস্থ ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৪ জন ও মৃত ২৮ হাজার ৪২৫ জন) বাদ দিলে বর্তমানে দেশে চিকিৎসাধীন রোগী রয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৬২৮ জন। তাদের সাড়ে ৯৮ শতাংশই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এত চিকিৎসাধীন রোগী আগে দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেও দেশে চিকিৎসাধীন রোগী ছিল সাড়ে আট হাজার। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার মাস শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে এসেছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে দেশে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করার পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯তম। তবে চিকিৎসাধীন রোগীর দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৮তম স্থানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কম ভর্তি হচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় ২ হাজার ৬২০ জন এবং আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যায় ৫০৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। অর্থাৎ মোট চিকিৎসাধীন রোগীর প্রায় সাড়ে ৯৮ শতাংশই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ বাড়িতে থাকা বিপুলসংখ্যক রোগীর নিয়মিত ফলোআপ করছে না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িতে থাকা রোগীরা কেমন আছেন, কী ওষুধ খাচ্ছেন এগুলো জানতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশ দিতে হবে স্থানীয়ভাবে যেন পরিকল্পনা করে রোগীদের ফলোআপ করা হয় এবং সেই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।