সবার আগে রাশিয়ার টিকা গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানালেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। গতকাল সোমবার তিনি বলেছেন, রাশিয়ার টিকা কার্যকর কি না, সে পরীক্ষায় যেসব স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকাটি প্রয়োগ করা হবে, এর মধ্যে প্রথম হতে চান তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মস্কোর টিকা অনুমোদন ও প্রথম ব্যাচের টিকা তৈরি করে মানুষের ওপর প্রয়োগের বিষয়টি কিছু বিজ্ঞানীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তাঁরা বলছেন, কেবল ১০ শতাংশ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সফল হওয়ার নজির রয়েছে। সেখানে তাড়াহুড়ো করে রাশিয়া তাদের টিকা অনুমোদন দিয়ে ফেলেছ।
কিছু গবেষক বলছেন, তাঁরা আশঙ্কা করছেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা না করে কেবল সম্মানের দিক বিবেচনাতেই রাশিয়া টিকার অনুমোদন দিয়েছে।
নিয়মিত সকালের সংবাদ সম্মেলন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমিই প্রথম টিকাটি গ্রহণ করব।’
বিশ্বজুড়ে টিকা তৈরির প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে গেছে।
রাশিয়ার টিকা ছাড়াও মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনার সরকার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে টিকা উৎপাদনের জন্য চুক্তি করেছেন।
মেক্সিকোর ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্থা ডেলগাদো বলেন, তাঁর দেশের ২০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন হবে। যদি তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হয়, তবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে টিকা পাওয়া যাবে।
মেক্সিকোতে ৫ লাখ ২২ হাজার ১৬২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে আর মারা গেছে ৫৬ হাজার ৭৫৭ জন।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, তাদের টিকাটির প্রথম ব্যাচ গত শনিবার উৎপাদন করা হয়েছে।
রাশিয়া বলছে, তারা যে টিকা তৈরি করেছে এবং উৎপাদন পর্যায়ে গেছে, তা এ মাসের শেষ দিকে সরবরাহ শুরু হবে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষ না হলেও রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এটি মানবদেহে প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাও গড়ে তুলতে পেরেছে। টিকাটি উদ্ভাবন করেছে রুশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। সহযোগিতা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ। রাশিয়ার তৈরি টিকা নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে একে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
টিকাটির কার্যকারিতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপের মানবপরীক্ষা যেখানে হাজারো স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রয়োগ করা হয়, তা অনুসরণ করা হয়নি। নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে নিরাপদ টিকার অনুমোদন পেতে হলে এ পরীক্ষাকে প্রয়োজনীয় বলে ধরা হয়। রাশিয়ার টিকা অনুমোদন পেলেও এর বিস্তৃত পরীক্ষা হয়নি বলে তাদের দাবি সম্পর্কে গবেষকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার টিকার বিষয়টি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।
রাশিয়ার টিকাটির নাম ‘স্পুটনিক ৫’, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহের নামে নামকরণ করা করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, টিকাটি নিরাপদ। রাশিয়ার তৈরি টিকা নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে একে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। দেশটির জাতীয় টেলিভিশনেও একে নিরাপদ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। পুতিন বলেন, তাঁর এক মেয়ের শরীরেও টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে।
ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে টিকা প্রস্তুতকারক গামেলিয়া ইনস্টিটিউট জানায়, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি নাগাদ ৫০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে রাশিয়া।
রাশিয়ার তৈরি করা প্রথম ব্যাচের টিকাগুলো চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া হবে। এরপর তা সাধারণ জনগণের ব্যবহারের জন্য ছাড়া হবে। ইকোনমিক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পরীক্ষা ও জনগণের ওপর প্রয়োগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে।
গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান আলেক্সান্ডার গিনটসবার্গ বলেছেন, কয়েক দশকের পুরোনো ব্যাপক গবেষণালব্ধ বৈজ্ঞানিক প্ল্যাটফর্মের ভিত্তিতে টিকাটি তৈরি। টিকাটির নাম ‘গাম-কোভিড-ভ্যাক’। দীর্ঘ মেয়াদে সুরক্ষা পেতে টিকাটির দুটি ডোজ
ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করতে হয়। টিকার দুটি ডোজের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এতে ব্যবহৃত অ্যাডেনোভাইরাস, যা শরীরের কোষে টিকাটি পৌঁছায়। সর্বোচ্চ কার্যকারিতা পেতে দুই বা তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিতে হয়।
টিকাটির নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, এটি ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের জন্য উপযুক্ত এবং অন্য অ্যান্টিজেনের সঙ্গেও দেওয়া যাবে।
টিকাগ্রহীতাকে চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণ করবেন এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাঁরা শরীরের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য জানাবেন। সম্ভাব্য কোনো জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।