আদালত চলে গেলেই স্বাস্থ্যবিধি উধাও

মোহাম্মদপুর টাউন হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। আজ বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখেই পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে ফেলছেন। শাটার নামিয়ে ভোঁদৌড় দিচ্ছিলেন দোকানিরা। আদালত চলে গেলে মুখের মাস্ক আবার পকেটে ঢোকে। শাটার তুলে দিয়ে ক্রেতার জন্য চলে অপেক্ষা। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় দেখা গেল এমন চিত্র।

দেশজুড়ে লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপের তৃতীয় দিন আজ। সরকারি নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের না হওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। বরং ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হলে নানা ছুতো দেখাচ্ছেন নগরবাসী।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও এলাকায় আজও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও র‌্যাব এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। তবে অভিযানের পরও মানুষের মধ্যে নির্দেশনা মানতে অনীহা দেখা গেছে।

আজ বেলা আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়। শুরুতে টাউন হল সরকারি পাকা মার্কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢোকেন। এ সময় দোকানি ও ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানের শাটার ফেলে দেন। কেউ কেউ দোকানের ভেতরেই থাকেন। কেউবা দৌড়ে পালান।

এই মার্কেটের একটি দোকানের নাম ফুজি কালার স্টুডিও ও ল্যাব। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখে দোকানিরা শাটার নামিয়ে দেন। আদালত টোকা দিলে শাটার খোলা হয়। এ সময় আদালত দোকান কেন খোলা তা জানতে চান। জবাবে দোকানি মো. মোক্তার আদালতকে বলেন, মার্কেট কমিটি তাঁদের নির্দেশনা দিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলতে। অথচ দোকানি মো. মোক্তারসহ সেখানে থাকা অন্তত তিনজনের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান না হওয়া সত্ত্বেও দোকান খোলা রাখার অপরাধে আদালত ফুজি কালার স্টুডিও ও ল্যাবকে দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনের বিধানে এই অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
টাউন হল মোড়ের বটতলার সামনে দিয়ে অনেকেই মুখে মাস্ক ছাড়া হাঁটাচলা করছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখে তাঁদের অনেকেই সতর্ক হচ্ছিলেন। কারও কারও অবশ্য এসবেও গা নেই কোনো। তেমনই একজন ২২ বছর বয়সী রংমিস্ত্রি মো. শরীফ। তিনি দুপুরে খেয়ে কাজে যাচ্ছিলেন। আদালত মুখে মাস্ক কেন নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় ভুলে রেখে এসেছেন। এ সময় তাঁকে ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

অসচ্ছল লোকদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেন আদালত

সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী, কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধ থাকবে। অথচ মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার অন্য দোকানিরা এই নিয়ম মানছেন না। সেখানে হার্ডওয়্যার, স্যানিটারি, গ্লাস পণ্যের দোকানও খোলা ছিল। খাবারের দোকানগুলোতে ভেতরে বসে খাবার পরিবেশনের নিয়ম না থাকলেও তা অনেকেই মানছেন না।

টাউন হলের শের শাহ সুরী সড়কের নিউ মেঘনা স্যানিটারি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, দোকানটি বন্ধ থাকার কথা। দোকানি রাসেল হোসেনের মুখে মাস্কও ছিল না। ভ্রাম্যমাণ আদালত এ সময় দোকানে আসেন। দোকান খোলা কেন জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘নির্দেশনা জানতাম। কিন্তু ব্যবসা তো করতে হবে।’ আদালত এ সময় এই দোকানিকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন।

একই সড়কে একটু পাশেই কাশবন রেস্তোরাঁ। এর ভেতরে বসেই খাওয়াদাওয়া করছিলেন ক্রেতারা। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে দেখে কেউ কেউ দৌড়ে সরে যান। এই রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেনের দাবি, তাঁরা নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন। তবে ক্রেতারা নাকি তা শুনতে চান না। এ সময় এই রেস্তোরাঁকে আড়াই হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

টাউন হল, তাজমহল সড়ক, আদাবর, শ্যামলী স্কয়ার ও রিং রোডে অভিযান চলে। বিকেল পাঁচটার পর তা শেষ হয়। এ সময় সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ১৮ জনকে ২৮ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি অসচ্ছলদের মধ্যে বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়।

অভিযানের নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সব দোকানিই নির্দেশনা জানেন। তবু তাঁরা ভঙ্গ করছেন। কিছু কিছু খাবারের দোকান নিয়ম মানছে না। যতটুকু সম্ভব মানুষের সমাগম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধির সাফল্য আসবে না। একজনকে অর্থদণ্ড দেওয়ার মানে তাঁর আশপাশের মানুষ যেন আরও সতর্ক হন।