আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন

দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছয় দিন ধরে ৩০-এর ঘরে রয়েছে।

দেশে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা সোয়া ২ লাখ ছাড়িয়েছে। করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সুস্থ ও মৃতদের বাদ দিলে বর্তমানে দেশে চিকিৎসাধীন রোগী রয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ৯৩০ জন। দেশে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এত চিকিৎসাধীন রোগী এর আগে দেখা যায়নি। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯৯ শতাংশই বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগের জটিলতা কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কম ভর্তি হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৪৬১ জন। আর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও এইচডিইউ শয্যায় ৫১১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ৯ হাজার ৫২ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে টানা ১২ দিন ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৩০ জন। এ নিয়ে টানা ছয় দিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৩০-এর ঘরে থাকছে।

বাড়িতে থাকা রোগীরা কেমন আছেন, কী ওষুধ খাচ্ছেন এগুলো জানতে হবে। রোগীদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যাতে জানতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালু থাকা দরকার।
আবু জামিল ফয়সাল, জনস্বাস্থ্যবিদ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেও দেশে চিকিৎসাধীন রোগী ছিল সাড়ে আট হাজার। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার মাস দৈনিক শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে এসেছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্তের ঘোষণা দেয় সরকার। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৮ জন। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৫২৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৪ জন।

পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯তম। তবে চিকিৎসাধীন রোগীর দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৭তম স্থানে।

বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া বিপুলসংখ্যক রোগীর নিয়মিত খোঁজখবর স্বাস্থ্য বিভাগ করছে না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িতে থাকা রোগীরা কেমন আছেন, কী ওষুধ খাচ্ছেন এগুলো জানতে হবে। রোগীদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যাতে জানতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালু থাকা দরকার।

সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৩৯তম। চিকিৎসাধীন রোগীর দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৭তম স্থানে। বিভিন্ন হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় গতকাল করোনা রোগী ভর্তি ছিল ২ হাজার ৪৬১ জন। আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যায় ৫১১ জন।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই মহামারিতে সংক্রমণ চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে। গত বছরের মাঝামাঝি ডেলটা ধরনের দাপটে দেশে করোনায় মৃত্যু, শনাক্ত এবং শনাক্তের হার বেড়েছিল। তবে গত আগস্টে দেশব্যাপী করোনার গণটিকা দেওয়ার পর সংক্রমণ কমতে থাকে।

দেশে বর্তমানে করোনার অতিসংক্রামক ধরন অমিক্রনের দাপট চলছে। করোনার এই ধরনের বিস্তারে মাসখানেকের মধ্যেই সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকেও দেশে করোনা শনাক্ত ১ শতাংশের ঘরেই ছিল। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৯ হাজার ৪৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫২ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৯৫। এর আগে টানা ১৬ দিন শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের বেশি ছিল।