রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কড়া ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে মার্কেটগুলোর কর্তৃপক্ষ। মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। জীবাণুনাশক বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার ও তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থাও রয়েছে। বিপরীত চিত্র সাধারণ বিপণিবিতানগুলোয়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। কেউ তদারকিও করে না।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার শপিংমল, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স ও মৌচাক মার্কেটে ঘুরে গতকাল রোববার স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের প্রবেশমুখে একজন নিরাপত্তারক্ষীকে জীবাণুনাশক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্রেতারা গেলে তাঁদের হাতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেন তিনি। তবে তাপমাত্রা মাপা হয় না। ক্রেতারা মোটামুটি সবাই মাস্ক পরা।
রাফিয়া আহমেদ নামের এক ক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কেট এমনিতেই খুব ভিড়ের জায়গা। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কড়াকড়ি না থাকলে আসাটা ঝুঁকিপূর্ণ।’
বেলা ১১টার দিকে টোকিও স্কয়ারে ক্রেতার সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। তবে বিক্রেতারা জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ে। বিপণিবিতানটির ব্যবস্থাপক দেওয়ান শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শুরু থেকেই হাত ধোয়া, তাপমাত্রা মাপা ও জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা রেখেছেন। দোকানগুলোয় বলে দেওয়া হয়েছে মাস্ক ছাড়া পণ্য বিক্রি না করতে। তাপমাত্রা মাপতে দেখা না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, হয়তো মাপার যন্ত্রটি চার্জ দেওয়ার কারণে তখন ছিল না।
বসুন্ধরা সিটির প্রতিটি প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক ছিটানো ও তাপমাত্রা মাপা হতে দেখা যায়। একটি জীবাণুনাশক টানেলও রয়েছে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মাস্কের ব্যাপারে বিপণিবিতানটির নিরাপত্তাকর্মীদের বেশ কড়াকড়ি আচরণ করতে দেখা যায়। বিক্রেতারাও মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কেটের ভেতরে আমাদের কর্মীরা ঘুরে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কেউ মাস্ক ছাড়া থাকলে সতর্ক করা হয়।’ তিনি বলেন, কোনো দোকানে বিক্রেতাকে মাস্ক ছাড়া দেখা গেলে সেই দোকানের বিদ্যুৎ–সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
দেশে বেশ কিছুদিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩৮ জন। বিশেষজ্ঞরা দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। সরকারও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছে। মাস্ক পরা বাধ্য করতে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবু স্বাস্থ্যবিধি মানতে সচেতনতার অভাব দেখা যায়।
নিউমার্কেটে গিয়ে গতকাল দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক ব্যবহার করার জন্য কয়েকটি বড় ব্যানার টাঙানো। এর বাইরে আর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। মাস্ক না পরেই ঢুকছেন অনেকে। ক্রেতা ছাড়াও বিক্রেতাদেরও অনেকের মুখে মাস্ক নেই। বিশেষ করে ফুটপাতে হকারদের মধ্যে মাস্ক না পরার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
মো. কাসেম নামের এক বিক্রেতাকে মাস্ক না পরে থাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বলেন, ‘মাস্ক আছে। কিন্তু আমাদের তো কাস্টমার ডাকতে হয়। মাস্ক পরে ঠিকমতো ডাকা যায় না।’
ক্রেতাদের অনেকের মধ্যেও অসচেতনতা লক্ষ করা যায়। মাস্ক না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে অনেকে প্রতিক্রিয়া দেখান। তবে সচেতন ক্রেতাও রয়েছেন, যাঁরা বিক্রেতাকে মাস্ক পরতে বাধ্য করেন। সুলতানা আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘অনেক দোকানদারই মাস্ক পরে থাকেন না। আমি তাঁদের আগে মাস্ক পরতে বলি, তারপর পণ্যের দরদাম করি।’
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টানেল দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে চায় না। তাপমাত্রা মাপার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন আর জ্বর নিয়ে মানুষ বের হয় না। তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রগুলোর কার্যকারিতা সঠিক কি না, তা নিয়েও তিনি সন্দিহান।
নিউমার্কেটে কয়েকটি জীবাণুনাশক টানেল রয়েছে। তবে তার ব্যবহার নেই। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টানেল দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে চায় না। তাপমাত্রা মাপার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন আর জ্বর নিয়ে মানুষ বের হয় না। তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রগুলোর কার্যকারিতা সঠিক কি না, তা নিয়েও তিনি সন্দিহান।
মৌচাক মার্কেটেও স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। বেশির ভাগ বিক্রেতার মাস্ক থুতনির নিচে। মৌচাক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে মার্কেটে সব ব্যবস্থাই ছিল। কিন্তু যখন চারদিকে শিথিলতা শুরু হলো, তখন থেকে তাঁদের কার্যক্রমও নেই।