হাইকোর্ট ভবন
হাইকোর্ট ভবন

আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেল ২১ শিক্ষার্থী

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম শ্রেণিতে ২১ শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তাদের সহোদরেরা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে। শিশুদের অভিভাবকদের করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন।

রায়ের বিষয়টি জানিয়ে অভিভাবকদের আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে ২১ শিক্ষার্থীকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি নিতে নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন। তারা ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিপ্রত্যাশী ছিল। এখন তারা ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে স্কুলটিতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে।’

অবশ্য হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।  

চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালায় সংশোধনী আনা হয়। সংশোধনীর ১৪বিধি অনুসারে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরুর (এন্ট্রি)শ্রেণিসহ অন্যান্য শ্রেণিতে মোট আসনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ আসনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর ভাই–বোনদের ভর্তি করা যাবে। তবে আবেদনের সংখ্যা বেশি হলে ভর্তি কমিটি কর্তৃক লটারির মাধ্যমে ওই ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্বাচন করা যেতে পারে।

রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, নীতিমালা সংশোধনের পর ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করে বিফল হয়ে ২১ শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানির পর গত ২৮ মার্চ হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলে নীতিমালার ১৪ বিধি কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে আইন অনুসারে আসনের প্রাপ্যতা থাকা সাপেক্ষে রিট আবেদনকারীদের কন্যাদের ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি নিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘আসনের প্রাপ্যতা থাকা সাপেক্ষে’—হাইকোর্টের আদেশের এই অংশবিশেষ নিয়ে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন অভিভাবকেরা।

শুনানি নিয়ে গত ৩১ জুলাই আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে শিশুদের নির্দিষ্ট শ্রেণিতে চলতি বছর (২০২৩) অথবা পরবর্তী বছর (২০২৪) ভর্তির সুযোগের স্বার্থ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব, বিশেষভাবে এক মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় রুলের শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আরিফ চৌধুরী। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।

নীতিমালার ১৪বিধির কারণে শিশুদের একটি বছর ঝরে গেল বলে অভিযোগ করছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মাধ্যমিক, নিম্নমাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২২ হয়। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভিকারুননিসায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনের সময় গত বছরের ১৬ নভেম্বর শুরু হয়, যা গত বছরের ৬ ডিসেম্বর শেষ হয়। তখন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহোদর বা সহোদরা শিক্ষার্থী হলে তার অন্য ভাই/বোনের ভর্তিতে কোটা ছিল না। নীতিমালায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সংশোধনী আনা হয়। এতে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিয়ে অর্থাৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিতে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। সংসদ ছাড়া অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আইন কিংবা বিধির ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দিতে পারে না। হাইকোর্ট সংশোধিত নীতিমালার ১৪বিধি অবৈধ ঘোষণা করেছেন।’