ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া

ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ঢাকায় এক বাড়ি, দুই ফ্ল্যাট, জমি

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তাঁর পরিবারের রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, বাড়ি ও জমির তথ্য পাওয়া গেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।

দৈনিক মানবজমিন পত্রিকা গতকাল রোববার আছাদুজ্জামান মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গতকালই আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানান। ফোনে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তিনি প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন।

কোন সম্পদ কীভাবে কেনা, তা প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেন আছাদুজ্জামান মিয়া। তাঁর দাবি, সব সম্পদ বৈধ আয়েই কেনা। তবে মানবজমিন যেসব সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ করেছে, তার সব তথ্য সঠিক নয়। তাঁদের যত সম্পদ, সেটি আয়কর বিবরণীতে বিস্তারিত উল্লেখ আছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাতে মুঠোফোনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার জহুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের তথ্য প্রকাশের খবর তাঁর নজরে আসেনি। কারও সম্পদ থাকলেই সেটা অবৈধ হবে, তা নয়। যদি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে দুদক ব্যবস্থা নেবে।

আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।

আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের তথ্য প্রকাশের খবর তাঁর নজরে আসেনি। কারও সম্পদ থাকলেই সেটা অবৈধ হবে, তা নয়। যদি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে দুদক ব্যবস্থা নেবে।
জহুরুল হক, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার

দুদক সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সম্পদ অনুসন্ধান করছে। এর মধ্যেই গত ৪ মে তিনি সপরিবার দেশ ছাড়েন। পরিবারসহ তাঁকে তলবও করেছে দুদক। বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকায় মোট ১২টি ফ্ল্যাট, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯৭ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে আদালতের নির্দেশে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব, একটি বেসরকারি টেলিভিশনসহ দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এবং ৩টি বিও হিসাবও (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া যা বললেন

মানবজমিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িটির মালিক আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামান। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে তিনি প্রথম আলোকে জানান।

রাজধানীর ইস্কাটনেও আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমন্ডিতে। এ দুটি ফ্ল্যাট থাকার তথ্য প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার। বলেন, ইস্কাটনের ফ্ল্যাটটি তাঁদের কেনা প্রথম ফ্ল্যাট। পরে তাঁর ছেলেমেয়েদের ধানমন্ডির স্কুলে ভর্তি করান। তখন ছেলেমেয়ের সুবিধার জন্য ধানমন্ডিতেও একটি ফ্ল্যাট কেনেন।

বৈধ আয়ে এসব জমি কেনা হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর স্ত্রী এবং তিনি অনেক সম্পদের মালিক। তাঁর এক ছেলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন। ছেলের বউ একটি ব্যাংকে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রীরও বুটিকের ব্যবসা রয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার

এর বাইরে সিদ্ধেশ্বরীতে আছাদুজ্জামানের মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়ে চিকিৎসক, জামাতাও চিকিৎসক। ওই ফ্ল্যাট বৈধ আয়ে তাঁরা কিনেছেন।

গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে। এ ছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা হয় তাঁর নামে।

মানবজমিন-এর প্রতিবেদনের এসব তথ্যের বিষয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বৈধ আয়ে এসব জমি কেনা হয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর স্ত্রী এবং তিনি অনেক সম্পদের মালিক। তাঁর এক ছেলে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন। ছেলের বউ একটি ব্যাংকে উচ্চ বেতনে চাকরি করেন। তাঁর স্ত্রীরও বুটিকের ব্যবসা রয়েছে।

মানবজমিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। এ ছাড়া আছাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। নিকুঞ্জ-১-এ আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলের নামেও একটি বাড়ি রয়েছে।

এ বিষয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আফতাবনগরে ২১ কাঠার প্লটের মধ্যে তাঁদের মালিকানা রয়েছে মাত্র ৭ কাঠার। বাকি জমির মালিক তাঁর দুই শ্যালিকা।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, পেশাগত জীবনে তিনি কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেননি। কিন্তু কয়েক বছর আগেও একটি চক্র তাঁকে বিপদে ফেলার জন্য দুদকে অভিযোগ জমা দিয়েছিল। পরে দুদক অনুসন্ধান করে সত্যতা পায়নি। এখন আবার সেই চক্র তাঁকে বিপদে ফেলতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের তথ্য যাচাই করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজন সরকারি চাকরিজীবী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থাবর সম্পদ থাকার যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, সেটি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে এসব সম্পদের উৎস বের করা দরকার। আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।