দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল স্থগিতের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ভোটের প্রসঙ্গ টানেন আবেদনকারী আইনজীবী। এ সময় আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ভোট যে রাতে হয়েছে বলছেন—কোনো মামলা হয়েছে কি না, দেখান। এ ধরনের কোনো ডকুমেন্ট (নথি) আছে কি না, দেখান।
শুনানি নিয়ে আজ সোমবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই তফসিলের বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ২৯ নভেম্বর রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
শুনানির একপর্যায়ে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, আগেও দুটি নির্বাচন দেখেছি। একবার ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমিও প্রার্থী ছিলাম, রাতে ভোট হয়েছে।
আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ভোট যে রাতে হয়েছে বলছেন, ‘কোনো মামলা করেছেন? খালি বক্তৃতা দিয়ে বললেই হবে?’ তখন ইউনুছ আলী বলেন, একজন সংসদ সদস্য মিডিয়াতে ঢালাওভাবে বলেছেন। তখন আদালত বলেন, ‘মিডিয়ার (সংবাদমাধ্যম) কথা এভাবে আমলে নিতে পারব না। রাতে নির্বাচন নিয়ে কোনো মামলা হয়েছে কি না, দেখান।’ তখন ইউনুছ আলী বলেন, মামলা তো ট্রাইব্যুনালে হয়।
রিট আবেদনকারী আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘শোনেন, ডায়াসে বক্তৃতা দেওয়া, কোর্টে বক্তৃতা দেওয়া, বাইরে বক্তৃতা দেওয়া আর সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বলা ভিন্ন বিষয়। এটি বাইরে বক্তৃতা দিয়ে নেতারা বলতে পারেন। সংসদেও বক্তৃতা দেওয়া যায়। কিন্তু রাতে নির্বাচন হয়েছে যে এ ধরনের কোনো ডকুমেন্ট আছে কি না, দেখান।’
আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘মি. ইউনুছ আপনি একজন দায়িত্বশীল লোক। আপনি কোর্ট পরিদর্শক, কোর্টকে (আদালত) সহায়তা করবেন।’ এ সময় ইউনুছ আলী বলেন, ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। আদালত বলেন, ‘তাহলে ট্রাইব্যুনালে আপনারা কি মামলা করেছেন?’ এর উত্তর না দিয়ে ইউনুছ আলী বলেন, ট্রাইব্যুনালে মামলা তো শেষ হয় না।
সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ ও একাধিক রায় তুলে ধরে রিটটি ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সেই সঙ্গে রিট আবেদনকারীকে দৃষ্টান্তমূলক খরচ আরোপ করার কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে একই মত প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।