নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ৩ নম্বর বালাগ্রাম ইউনিয়নের উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’ লেখা হাতপাখা। ৩ সেপ্টেম্বর
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ৩ নম্বর বালাগ্রাম ইউনিয়নের উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’ লেখা হাতপাখা। ৩ সেপ্টেম্বর

ইন্টারনেট–শিক্ষায় নারীদের ব্যাপক সাড়া

ইন্টারনেট শেখার বিশেষ এই উদ্যোগ গ্রামীণফোনের। সহযোগিতায় প্রথম আলো, নকিয়া ও ঢাকা ব্যাংক।

‘মোবাইলে ইন্টারনেটত কী করলে কী করা যায়, তা হামার ভালো লাইগছে। হামি শিখবার পারছি।’ বলছিলেন ইন্টারনেটবিষয়ক শিক্ষা ও সচেতনতা নিয়ে বগুড়ার একটি গ্রামে আয়োজিত উঠান বৈঠকে আসা এক গৃহবধূ। মোবাইলের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না। ইন্টারনেট ব্যবহার করে খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কীভাবে বেচাকেনা করা যায়, সে সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন তিনি। এখন তিনি ইন্টারনেটের কল্যাণে সেই কাজগুলো করতে পারবেন, যা আগে তাঁর পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।

‘ইন্টারনেটের দুনিয়া সবার’ প্রচারাভিযানের আওতায় বগুড়া জেলা ছাড়াও সারা দেশে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণে এ ধরনের উঠান বৈঠক চলছে। ইন্টারনেট যে মানুষের নানাবিধ চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণ করতে পারে, সে বিষয়ে হাতে-কলমে শেখাতে ভিন্ন রকম এ উদ্যোগ নিয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। দেশের প্রান্তিক নারীদের ইন্টারনেটবিষয়ক জ্ঞান সমৃদ্ধিতে আয়োজিত বিশেষ এ উদ্যোগের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো, নকিয়া ও ঢাকা ব্যাংক পিএলসি।

নগর বা শহুরে জীবনে যোগাযোগের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ইন্টারনেট। ল্যাপটপ-মোবাইল-স্মার্ট টিভিসহ বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করেন নানা পেশা ও বয়সের নারী-পুরুষ। যাঁদের বেশির ভাগই ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য বেছে নিয়েছেন মোবাইল। তবে শহরের নারীদের তুলনায় প্রান্তিক অঞ্চল ও গ্রামীণ নারীদের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার এখনো অনেক কম।

সারা দেশের দুই হাজার ইউনিয়নে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট বিষয়ে শিক্ষা ও সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়াই এ আয়োজনের লক্ষ্য। যাতে গ্রামীণ নারীরা ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার শেখার মাধ্যমে জীবনের চলার পথে ছোটখাটো সমস্যার সমাধান নিজেরাই করতে পারেন। ২০২৩ সালের মার্চে শুরু হওয়া বিশেষ এ কার্যক্রম চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার ৮৪৫টি ইউনিয়নে আয়োজনটি সম্পন্ন হয়েছে।

আয়োজনে ছিল ইন্টারনেট নিয়ে নানা বিষয়ের অনুশীলন, গেম, কুইজ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভিডিও প্রদর্শনী। কখনো ব্যক্তিগত, কখনো ছোট দলে ভাগ হয়ে প্রশিক্ষকের দেওয়া তাৎক্ষণিক কোনো অনুশীলন সম্পন্ন করছেন বৈঠকে আসা নারীরা। ছিল দলবদ্ধ সেশনের ফাঁকে স্বাস্থ্য ও ইন্টারনেট-সম্পর্কিত উন্মুক্ত কুইজ। প্রতিটি কুইজের উত্তরের পর হাততালির মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেন সবাই।

কুইজের সঠিক উত্তর দিয়ে ঢাকা ব্যাংকের সৌজন্যে স্মার্টফোন জেতার পাশাপাশি উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা পাচ্ছেন আকর্ষণীয় মূল্যছাড়ে নকিয়ার মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার সুযোগ।

এ আয়োজনে ভিডিওর মাধ্যমে অনলাইনে জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও সফল উদ্যোক্তার ভিডিও দেখানো হয়, যা নারীদের বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোগে সম্পৃক্ত হতে সাহস ও উৎসাহ জোগাবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী নারীরা শিশুর যত্নের পাশাপাশি নিজেদের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক জ্ঞান অর্জন করছেন। এখন পর্যন্ত আয়োজিত উঠান বৈঠকগুলোতে নারীদের মধ্যে বেশ সাড়া লক্ষ করা গেছে।

বগুড়ায় একটি উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নারীর অনুভূতি ছিল এমন—

‘ইন্টারনেটের ভাইয়ারা-আপুরা আমাদের অনেক সাহায্য করছেন। শেখানোর পাশাপাশি অনেক বিনোদন দিয়েছেন। অনেক ভিডিও দেখাইছেন।’

‘ইন্টারনেটের কী সুবিধা আছে, কী অসুবিধা আছে সে সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। শিশুদের শরীর সুস্থ রাখতে কীভাবে যত্ন নেব। কোন কোন পুষ্টিকর খাবার তাদের জন্য ভালো, সে সম্পর্কে জানছি।’

‘ফোর–জি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জেনেছি। এ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আমরা কীভাবে নিজেদের ব্যবসা করতে পারব, দেশ-বিদেশের খবর জানতে পারব, সে বিষয়ে জানছি।’

‘এসে দেখি সবকিছুই ভালো লাগল। যা জানতাম না সেটা জানতে পারিচ্ছি, বুঝতে পারিচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইন্টারনেটের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এ কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামের নারীরা তাঁদের দৈনন্দিন নানা প্রয়োজন মেটাতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ারও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ জন্যই উদ্যোগটি গ্রামীণ নারীদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।