কাউন্সিলররা পাহাড় কাটছেন,অভিযোগ জেলা প্রশাসকের

পাহাড় কেটে করা হয়েছে প্লট। গড়ে উঠেছে ঘর। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের লেকসিটি এলাকায়
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা ইচ্ছামতো পাহাড় কাটছেন বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৫তম সভায় এসব অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক।  

‘দু-একজন’ কাউন্সিলরের কথা বললেও তাঁদের নাম সভায় বলেননি জেলা প্রশাসক। তিনি আরও অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) পাহাড় কাটছে। সরকারি সংস্থার এমন ভূমিকা উদ্বেগের। জেলা প্রশাসনের একার পক্ষে পাহাড় কাটা বন্ধ করা সহজ নয়। এ জন্য অন্যান্য সরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের বেলায় পাহাড় কাটা হয়।

ভূমি কর্মকর্তারা রাতেও অভিযান চালান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন রাস্তা করছে। রাস্তা করবে ভালো কথা। কিন্তু পাহাড় কাটার অনুমতি তো তা তারা নিতে পারে। কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশন থেকে একটি কাগজ নিয়ে ইচ্ছামতো পাহাড় কাটছেন। দু-একজন কাউন্সিলর এমনভাবে পাহাড় কাটছেন, তাতে অনেকগুলো পাহাড় নষ্ট করে দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহরুল আলমের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘কাউন্সিলরই পাহাড় কাটেন, সহায়তা দেন অন্যদেরও’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিনুর রহমান বলেন, পাহাড়ের যেখানেই অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হবে, সেখানেই উচ্ছেদ করা হবে। তালিকা করে পাহাড়ের সব অবৈধ স্থাপনা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা কীভাবে গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ পান
পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীরা কীভাবে গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ পান, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি বলেন, বৈধতা না থাকার পরেও কীভাবে গ্যাস, বিদ্যুতের সংযোগ পান তা খুঁজে বের করতে হবে। পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। আর যাঁদের উচ্ছেদ করা হবে, তাঁদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা যায় কি না, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।

বিভাগীয় কমিশনার আমিনুর রহমান বলেন, ‘২০০৭ সালে ২৬টি কারণ খুঁজে বের করা হয়েছিল, ঠিক কি কি কারণে পাহাড় ধস হয়। সেখানে পাহাড় ধস রোধে ৩৬টি সুপারিশ ছিল, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। এ জন্য একটি কমিটি করা হবে।’

অবৈধ মানে অবৈধ

পাহাড়ের বেশির ভাগ অবৈধ স্থাপনা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির, তাঁদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্যায় মানে অন্যায়। অবৈধ মানে অবৈধ। অবৈধ স্থাপনা যাঁরই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় সিটি করপোরেশন ও সিডিএর দায়িত্বশীল প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। আগামী সভায় সংস্থার প্রধান বা দায়িত্বশীল প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন, এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় সাত সিদ্ধান্ত

আজকের  সভায় সাতটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ১. সব সংস্থা পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনার হালনাগাদ তালিকা করবে এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে উচ্ছেদ পরিচালনা করা হবে। ২. আগামী সভায় সংস্থার প্রধান বা দায়িত্বশীল প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। ৩. বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। ৪. পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। ৫. পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা ব্যক্তিদের আশ্রয়ণে পুনর্বাসনের চিন্তাভাবনা। ৬. পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে বসবাসের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ৭. ৩৬ দফা সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) মো. মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মাহবুবউল করিম, সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. আবদুল হালিম প্রমুখ।