তথ্যচিত্রে ফিরে দেখা

‘মাটির মায়া’ এখন অনলাইনে

রাজশাহীর পবা উপজেলার ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন ২০১৪ সালে এক অনন্য উদ্যোগ নেন। অফিসের নিচে একটি চালাঘর তৈরি করে সেখানে বসেই তিনি অফিস করতেন। ভূমি অফিসের সেবার দৃষ্টান্ত নিয়ে ‘এসি ল্যান্ডের মাটির মায়া’ শিরোনামে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোতে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তৈরি করা হয়েছিল প্রামাণ্যচিত্র।

শাহাদত হোসেন, সহকারী কমিশনার, ভূমি
 ছবি: প্রথম আলো

২০১৪ সালের আগের কথা। ভূমি অফিস মানেই যেন ছিল ‘দালালের আখড়া’। সেবাগ্রহীতারা এসি-ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার–ভূমি) পর্যন্ত যেতেই পারেন না। তার আগেই দালালের খপ্পরে পড়ে টাকা-পয়সা খুইয়ে বছরের পর বছর ঘুরতে থাকেন। কোনো কোনো অফিসে একটি রেকর্ড খুঁজে বের করতেই দেড়-দুই বছর লেগে যেত। রাজশাহীর পবা উপজেলার ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহাদত হোসেন এক অনন্য উদ্যোগ নেন। অফিসের নিচে একটি চালাঘর তৈরি করেন। সকালে এসেই সেখানে বসেন। দালালের জায়গাটি দখল করে নেন তিনি। সেবাগ্রহীতাদের হাতে টোকেন ধরিয়ে দেন। এরপর নাম ধরে ডাকেন। ছোটখাটো বিষয় হলে হাতে-নাতে সমাধান করে দেন। না হলে অফিসের নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠান অথবা তারিখ দিয়ে দেন। এই কাজে নামার আগে তিনি দেড় বছর ধরে নথির সারণী তৈরি করেন, যাতে এক মিনিটের মধ্যে যে কোনো খতিয়ান খুঁজে পাওয়া যায়।

এই ভূমি অফিসের সেবার দৃষ্টান্ত নিয়ে ‘এসি ল্যান্ডের মাটির মায়া’ শিরোনামে ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম আলোতে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর যেন প্রশাসনের চোখ খুলে যায়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সারা দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের কপিসহ চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, পবা উপজেলা ভূমি অফিসের আদলে সব ভূমি অফিসে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্যোগ বাস্তবায়নের সময়কালও বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর সারাদেশে ভূমিসেবা নিয়ে একটি আন্দোলন তৈরি হয়। বিভিন্ন জায়গায় অনেক এসি–ল্যান্ড এই কাজে আরও সৃজনশীলতা দেখানোর  চেষ্টা করেন।

২০১৯ সালে ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলো শাহাদত হোসেনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে ‘মাটির মায়া’ শিরোনামে তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়। তখন সারাদেশে এ নিয়ে একটা জাগরণ সৃষ্টি হয়।

এখন ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একসময় এ কাজের জন্য মানুষের হয়রানির শেষ ছিল না। এছাড়া এখন ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। হোল্ডিং নম্বর জানা থাকলে যে কেউ যেকোনো জায়গা থেকে তার বকেয়া করের পরিমাণ জানতে পারছেন। পরিশোধ করতে পারছেন। এই উদ্যোগ থেকে ভূমিসেবার একটি আমুল পরিবর্তন ঘটে গেছে। বিবিধ মামলার (মিস কেস) শুনানি ছাড়া সবকিছুই এখন অনলাইনে সম্পন্ন হচ্ছে।

সারা দেশের (তহসিল অফিসসহ) মোট ৪ হাজার ৫৯৪টি ভূমি অফিসে অনলাইন ভূমিসেবা চালু হয়েছে। এই কার্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবা হচ্ছে নামজারি। এই  সেবায় এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। ২৮ দিনে নামজারির কথা বলা হলেও ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস ৯ দিনেও নামজারি রেকর্ড করেছে। সারাদেশের মধ্যে এই কাজে ঢাকা বিভাগ প্রথম ও রাজশাহী বিভাগ চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। তবে রাজশাহী বিভাগের শীর্ষে রয়েছে রাজশাহীর সেই পবা ভূমি অফিস। এখন সেখানকার এসি–ল্যান্ড অভিজিৎ সরকার। তিনি জানান, এই অফিসে ১৯ দিনেই নামজারির কাজ হচ্ছে। তাদের কোনো নথি পেন্ডিং নেই। ‘land.gov.bd’-তে প্রতিদিন রাতে সারাদেশের ভূমি অফিসের প্রতি ৯০ দিনের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। যে কেউ এই সাইট ভিজিট করে যেকোনো সময় তথ্য দেখে নিতে পারেন।