চিকিৎসকের পরামর্শ, স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সের তথ্য চেয়ে সারা দেশ থেকে লোকজন কল করেছেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় টেলি স্বাস্থ্যসেবা ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ এ কলের সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। পুরো জুন মাসে যত সংখ্যক কল এসেছিল, তার চেয়ে বেশি কল এসেছে আগস্ট মাসের প্রথম ২০ দিনেই। চিকিৎসকের পরামর্শ, স্বাস্থ্যসেবা, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সের তথ্য চেয়ে সারা দেশ থেকে লোকজন কল করেছেন।
১৬২৬৩ নম্বরটিকে উচ্চারণ করা হয় ‘এক বাষট্টি তেষট্টি’।
স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ তথ্য অনুসারে, এ বছরের মে মাস থেকে দেশে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। আর ওই সময় থেকে ক্রমে বেড়েছে কল। মে থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত এক বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে, সবচেয়ে বেশি কল এসেছে ভাইরাল জ্বর নিয়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থেকে জ্বর নিয়ে কল বেশি এসেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বাতায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ চালু হয়। এটি টোল ফ্রি নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের অধীনে ২৪ ঘণ্টার এই স্বাস্থ্যসেবা পরিচালিত হয়। সিনেসিস আইটি লিমিটেড নামে একটি মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে।
স্বাস্থ্য বাতায়নের তথ্য অনুসারে, মে মাস থেকে কলের সংখ্যা অনেকবেড়েছে। এপ্রিল মাসে ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি কল এসেছিল। আর আগস্ট মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত কল এসেছে ১ লাখ ২৮ হাজারের বেশি। এর মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ চেয়ে কল এসেছে ৯৫ হাজার ৭৮২টি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবার তথ্য চেয়ে ৪ হাজারের বেশি, অ্যাম্বুলেন্সের তথ্য চেয়ে ৭ হাজারের বেশি, সেবা সম্পর্কে জানতে চেয়ে ১৮ হাজারের বেশি এবং অভিযোগ জানিয়ে কল এসেছে ৪ হাজারের বেশি। ৭ আগস্ট সর্বোচ্চ সংখ্যক ৭ হাজার ৩২০টি কল এসেছে।
রাজধানীর কুড়িল এলাকার বাসিন্দা মো. আবু বকর সিদ্দিক প্রথম আলোকে জানান, তিনি ২০ আগস্ট ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে ১ চেপে ডেঙ্গুর বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। তিনি ১২ দিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তাঁর খাবারে রুচি নেই, শরীর দুর্বল লাগে। স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে চিকিৎসক তাঁকে রক্তের আরও কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরায় স্যালাইন নিতে বলেন।
১৭ আগস্ট এই প্রতিবেদকও তাঁর শিশুসন্তানের জন্য কল করেন। কল করে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য শূন্য চাপতে হয়। কলটি গ্রহণ করে চিকিৎসক জ্বরের বিবরণ শুনে প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন ও জ্বরের ৪৮ ঘণ্টা পর ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা করতে বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের তথ্য অনুসারে, আগে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এর সঙ্গে ১৬২৬৩–এর সমন্বয় ছিল। মাসখানেক আগে হেল্পলাইন ৩৩৩–এর সঙ্গেও ১৬২৬৩–এর সমন্বয় করা হয়েছে। সরকারির বিভিন্ন তথ্য সহায়তা ও দুর্যোগের সময় সাহায্য চাইতে ৩৩৩ নম্বর চালু রয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে কেউ কল করলে তা এখন ১৬২৬৩–তে স্থানান্তর করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহাদত হোসেন বলেন, শুধু ডেঙ্গুর কারণে নয়, স্বাস্থ্য বাতায়নকে আরও কার্যকর করার কারণেও কলের সংখ্যা বেড়েছে। কল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত বছরের মার্চে চুক্তি শেষ হয়ে যায়। ওই সময় কলের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা ছিল। মে মাস থেকে চুক্তি নবায়ন হয় এবং সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে কলের লক্ষ্য (দিনে ১০ হাজার কল) দেওয়া হয়েছে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, প্রচার বাড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, আগে ‘এক বাষট্টি তেষট্টি’তে কল করলে স্বয়ংক্রিয় কণ্ঠে কোভিডের জন্য ১ চাপার পরামর্শ দেওয়া হতো। এখন সেটি ডেঙ্গুর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ চেয়ে আসা কলগুলোর মধ্যে মে থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত শীর্ষ ১০টি অসুস্থতার কল বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে সিনেসিস আইটি লিমিটেড। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৩৫০টি কল এসেছে ভাইরাল জ্বর নিয়ে। সর্দি–ঠান্ডায় কল এসেছে ৪ হাজার ২২৩টি, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৩ হাজার ৪৫২টি, ডায়রিয়া নিয়ে ৩ হাজার ৭৫টি। বাকি ছয় ধরনের অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, গর্ভাবস্থা ও পরিবার পরিকল্পনা, অ্যালার্জি, অ্যাসিডিটি, শুকনা কাশি ও বমি।
ওই বিশ্লেষণ অনুসারে, সাড়ে তিন মাসে ডেঙ্গু–সর্ম্পকিত কল এসেছে ২৮ হাজার ২৩৯টি। মে মাসের তুলনায় আগস্টের প্রথম ২০ দিনে এ–সংক্রান্ত কল এসেছে দ্বিগুণ। কলের ৪৮ শতাংশ ঢাকা বিভাগের। কল করা ব্যক্তিদের ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪১ শতাংশ নারী।
সিনেসিস আইটি লিমিটেড এবং স্বাস্থ্য বাতায়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কলের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে ডেঙ্গু একটি বড় কারণ। ডেঙ্গু শঙ্কায় জ্বর, ঠান্ডা ও কাশি নিয়েও কল বেড়েছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরা বাড়িতে থেকে কী কী চিকিৎসা নেবেন, সেই পরামর্শ চেয়েছেন। তিনি জানান, স্বাস্থ্য বাতায়নে ১৬০ ধরনের অসুস্থতায় কল আসে। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় তিন পালায় ১০০ জন চিকিৎসক ও ৩০ জন স্বাস্থ্য তথ্য কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন।