সারা দেশের সবখানে অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
আজ রোববার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল’ পাসের আলোচনায় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। এর জবাব দিতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘একটি বিষয়ে তাঁরা (আলোচনায় অংশ নেওয়া সংসদ সদস্যরা) সবাই একমত, আমিও তাঁদের সঙ্গে একমত। সারা দেশের সর্বত্র, অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। তুলনা বলতে আনুপাতিক হারে। যে পরিমাণ পাবলিক মানি (সরকারি টাকা) ৩০-৪০ বছর আগে ব্যয় হতো, তার তুলনায় ২-৩-৪ গুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। ফলে সুযোগ-সুবিধা...চুরির সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। আমি বলব এটা জাতীয় সমস্যা। আইনকানুন পাস করে, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে, জনমত তৈরি করে, জনগণের কাছে স্বচ্ছতা তুলে ধরে প্রচার করি, এর (দুর্নীতি) পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কোনো টেন্ডার (দরপত্র) তিনি মন্ত্রী হিসেবে পাস করতে পারেন না। কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করে এটা চূড়ান্ত করা হয়। এরপরও যদি সংশয়বোধ থাকে, সেই ভূতে ভয় না পেয়ে একটানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
এর আগে বিলের আলোচনায় গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এখন টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। একশ্রেণির আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ বর্তমান টেন্ডারব্যবস্থাকে নিরাপদ মনে করে এবং এর আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এর ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে, যেমন পর্দা কেনা, বালিশ কেনা।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি অভিযোগ করেন, আগে ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ দুর্নীতি হতো। আর এখন ১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ কাজ হয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ দুর্নীতি হয়। তিনি বলেন, অনেক অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এগুলো আটকানো গেলে এখন দেশের অর্থনীতি ভালো থাকত। অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হচ্ছে, সেগুলো থেকে রিটার্ন আসছে না।
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, এসব বোঝার ক্ষমতা মন্ত্রীর নেই, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। কিন্তু ক্ষমতার অতিমাত্রায় এককেন্দ্রীকরণে একজন জ্ঞানী মন্ত্রীও যদি এ ধরনের প্রকল্প আটকাতে চান, তাহলে সে ক্ষমতা তাঁর কাছে নেই। কারণ, ‘সাপোর্টিং ইনস্টিটিউশন’ নেই। তিনি বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ব্যাংক প্রচণ্ড ঝুঁকির মুখে আছে। ডলার খোলাবাজারে কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এটা এখানে বলা যাবে না, বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দামের তারতম্যকে তিনি এ জন্য দায়ী করেন।
বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি বিল, ২০২৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এতে বলা হয়, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও পেশাদারত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ)’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার। এই আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিলুপ্ত হবে। বিপিপিএর ১৭ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তবে সরকার চাইলে সদস্যসংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারবে। পরিকল্পনামন্ত্রী হবেন এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। আর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কাউকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার। এই কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। বিপিপিএ তার কাজ সম্পাদনের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।