আলোচনা সভায় বক্তারা

রাজনীতিকেরা এখন রাজনীতির ভাষায় কথা বলেন না

অজয় রায়ের স্মরণসভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। ঢাকা, ১৭ অক্টোবর
ছবি: প্রথম আলো

‘খেলা হবে’—এটা রাজনীতির কোনো ভাষা নয়। রাজনীতিতে সংস্কৃতি না থাকার কারণে এ ধরনের ভাষার ব্যবহার হচ্ছে। শিল্পী–সাহিত্যিকেরাও এখন রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছেন। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রগতিশীল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি অজয় রায়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক স্মৃতিচারণা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের উদ্যোগে রাজধানীর টেনিস ফেডারেশনে এই সভা হয়। শুরুতে জাতীয় সংগীত ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনের পর অজয় রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন সভাপতির বক্তব্যে বলেন, মেধা যদি না থাকে, তাহলে মনন তৈরি হয় না। রাজনীতিতে মেধা নেই। সে জন্য রাজনীতির এই দশা। অজয় রায় সমাজকে বদলাতে চেয়েছিলেন। সমাজকে বদলাতে হলে কোনো রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন। তিনি সেই কাজ করেছিলেন।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশ অজয় রায়ের বাংলাদেশ নয়। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, সংগঠক ছিলেন, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু ৫২ বছরের বাংলাদেশ অজয় রায়ের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলে না। এটাই বাস্তবতা, এটাই সত্য। এই বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনালব্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হবে।

বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, অজয় রায় ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। তাঁর মুখ থেকে কোনো দিন খারাপ কথা শোনা যায়নি।

যাঁরা এখন রাজনীতি করেন, তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, মানুষ অশালীন ভাষা শুনতে চায় না। বড় দুই দল বলে ‘খেলা হবে’। এটা কোনো রাজনীতির ভাষা নয়। রাজনীতিতে সংস্কৃতি না থাকলে মুখে খারাপ ভাষা আসবে। রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা নিয়ে এলে অজয় রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে।

অজয় রায়ের সহধর্মিণী জয়ন্তী রায় বলেন, ধীরে ধীরে সবাই চলে যাচ্ছেন। অজয় রায়ের স্বপ্ন ছিল কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্য কিছু করা। অজয় রায়ের সে স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান।

দেশ এখন কঠিন ও জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, রাজনীতি মেধাহীনতায় ছেয়ে গেছে। মেধাহীনরা বিভিন্ন জায়গায় বসে আছেন। রাজনীতিকেরা আর রাজনীতিতে নেই। তাই রাজনৈতিক মানুষ তৈরি হচ্ছে না।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, দেশে কোনো সংকট তৈরি হলে অজয় রায় সবাইকে ডাকতেন, তাগাদা দিতেন কিছু করার জন্য। কিন্তু অজয় রায়ের মতো দুঃসময়ে ঘণ্টা বাজানোর কেউ এখন নেই। তিনি ছিলেন আস্থা ও ভরসার এক মানুষ।

সভায় আরও বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক মঞ্চের আহ্বায়ক সেলিম রেজা, পার্বত্য জনসংহতি সমিতির দীপায়ন খীসা, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক প্রমুখ।