রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আজ মঙ্গলবার প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাড়ামহল্লার দোকানে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম উঠেছে ৮০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। এ উপলক্ষে গরুর মাংসের চাহিদা বেড়ে গেছে। এ কারণে হাটে গরুর দাম বেড়েছে। গত কয়েক দিনে হাটে আকারভেদে একেকটি গরুর দাম ১০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত বাড়তি দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পরিবহনভাড়া ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গত জানুয়ারি মাসে গরু মাংসের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। গরুর খাবারের দাম বেশি, খামারিদের পোষাচ্ছে না, হাটে বেশি দামে গরু বিক্রি হচ্ছে—এসব অজুহাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম আরও একধাপ বাড়িয়ে দেন। তখন তাঁরা ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করেন। গত মাসে কোথাও কোথাও কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকায়ও মাংস বিক্রি হয়। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে এখন তাঁরা গরুর মাংসের দাম আরও বাড়িয়ে দিলেন।
আজ সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং, কাঁটাসুর কাঁচাবাজার, টাউন হল ও কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস কেনার জন্য দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। যেসব দোকানে দিনে একটি গরু জবাই করা হয়, আজ সেখানে তিন থেকে চারটি গরু জবাই করা হয়েছে।
এলাকাভেদে গরুর মাংসের দামে পার্থক্য দেখা গেছে। কাঁটাসুর বাজারে এক কেজি মাংসের দাম রাখা হচ্ছে ৭৫০ টাকা। এ বাজার থেকে আধা কিলোমিটারের কম দূরে কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকার একটি দোকানে তা কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। টাউন হল ও কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজারের বিভিন্ন দোকানে আবার ৭৬০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে গরু জবাই করতে দেখা গেছে।
কাঁটাসুর কাঁচাবাজারের আল মদিনা মাংসের দোকানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছিল। এ দোকানে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ৭০০ টাকায় বিক্রি হতো বলে জানান বিক্রেতা মো. মুন্না। তিনি বলেন, ‘হাটে গরুর দাম বাড়তি। তাই মালিক বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করতে বলেছেন।’
দোকানটির ব্যবস্থাপক রুবেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার ৫ মণ ওজনের একটি গরু ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ গরু অন্তত ১০ হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। পবিত্র শবে বরাতের কারণে গরুর দাম বেড়েছে।
রুবেল মিয়া জানান, দাম বেশি হওয়ায় অনেকে এক কেজির কম মাংস কিনছেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত মাংস বিক্রি করছেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও ব্যাচেলর ব্যক্তিরা কম পরিমাণে মাংস কিনছেন।
কাঁটাসুর কাঁচাবাজারের আরেকটি দোকান ‘মহসিন বিফ শপ’। এখানেও একই দামে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়।
আধা কিলোমিটার দূরে কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের পাশে ‘সিরাজ মাংস বিতান’। এ দোকানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। দাম বেশি হওয়া সত্ত্বেও দোকানের সামনে ক্রেতাদের ভিড়ও ছিল।
কেজি প্রতি দাম ৫০ টাকা বেড়েছে জানিয়ে দোকানটির বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল যে গরু কিনেছি, তাতে ন্যূনতম ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। তাই মাংসের দামও বেড়ে গেছে।’
অন্যত্র ৭৫০ টাকা করে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে জানানো হলে সিরাজুল দাবি করেন, ‘অন্য বিক্রেতারা মাংসে পানি দেন। এতে মাংসের ওজন বাড়ে, মাংস চকচক করে। আর আমার দোকানের মাংস দেখেন, কোনো পানি নেই।’
দোকানটি থেকে মাংস কিনছিলেন কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন, গত দুই মাসে তিনবার গরুর মাংসের দাম বাড়ল। এ দোকান থেকে জানুয়ারি মাসে কেজিপ্রতি ৬৮০ টাকায় মাংস কিনেছিলাম। দুই সপ্তাহ আগে তারা ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায় মাংস বিক্রি করেছিল। আজকে ৮০০ টাকা চাইছে।’
মোহাম্মদপুরের টাউন হল ও কৃষি মার্কেট কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেলা ১১টার দিকে এ দুই বাজারের প্রতিটি দোকানে কমবেশি ক্রেতার ভিড় দেখা গেছে।
টাউন হল বাজারের ইউসুফের মাংসের দোকানে প্রতি কেজি মাংস ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। বিক্রেতা ইউসুফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক জায়গায় আজ ৮০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে। আমার দোকানে যাঁরা আসছেন, তাঁদের বেশির ভাগ নিয়মিত ক্রেতা। তাই আমি বাড়তি দাম রাখছি না। কিন্তু আমার তো পোষাচ্ছে না।’
মোহাম্মদপুরের শের-শাহ-সূরী সড়কের বাসিন্দা শিমুল আহমেদ বলেন, ‘এ দেশে দাম বাড়তে কোনো যৌক্তিক কারণ লাগে না। কারণে-অকারণে সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। ক্রেতাদের পকেট কাটতে সবাই বসে থাকে। সরকারের উচিত কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা।’