রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ভাঙ্গা প্রেস এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি গুদামে লাগা আগুনে বিপুল অঙ্কের টাকার ক্রীড়াসামগ্রী পুড়ে গেছে। ওই ঘটনার পর গুদামমালিক গণি মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গণি মিয়ার ‘খান স্পোর্টস’ নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ক্রীড়াসামগ্রী রাখতে ভাঙ্গা প্রেস এলাকার চারতলা একটি ভবন ভাড়া নিয়েছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস বলেছে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর বলা যাবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী গণি মিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, আগুনে তাঁর দেড় কোটি টাকার ক্রীড়াসামগ্রী পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভাঙ্গা প্রেস এলাকার খান স্পোর্টসের গুদামে আগুন লাগে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে চারতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। পরে ডেমরা, পোস্তগোলা ও সিদ্দিক বাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ১০ ইউনিট প্রায় ৯ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল আটটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস বলেছে, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর বলা যাবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী গণি মিয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, আগুনে তাঁর দেড় কোটি টাকার ক্রীড়াসামগ্রী পুড়ে গেছে।
আজ শনিবার গুদামমালিক গণি মিয়ার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি বলেন, সারা জীবনের সঞ্চয় তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। নিয়েছিলেন ব্যাংকঋণ। সবে তা শোধ করেছেন। কিন্তু ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় তিনি ভাঙ্গা প্রেস এলাকার গুদাম ছেড়ে ব্যবসা ছোট করতে চেয়েছিলেন। এরই মধ্যে আগুনে নিঃস্ব হয়ে গেলেন।
এত বড় লোকসান কীভাবে সামলাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না বলে জানান গণি মিয়া। সেই চিন্তায় এখন তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঘটনার পর থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তাঁর দোকানটি বন্ধ রেখেছেন।
গণি মিয়া বলেন, ৩৫ বছর ধরে তিনি ক্রীড়াসামগ্রীর ব্যবসা করছেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খান স্পোর্টস নামের দোকানটি তাঁর কেনা। দোকানের ক্রীড়াসামগ্রী রাখতে তিনি আগুন লাগা ভবনটি গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। প্রতি মাসে দেড় লাখ টাকা গুদামের ভাড়া দেন তিনি।
গণি মিয়ার দোকান ও গুদামে ১০ থেকে ১২ কর্মচারী খাটতেন। গুদামটি দেখভালে একাধিক নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করতেন। রোজার কারণে তাঁরা বিকেল চারটার দিকে দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় চলে যেতেন।
এই ব্যবসায়ী বলেন, আগুন লাগার পর ভবনের নিচতলা, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা থেকে ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, কর্কসহ বেশির ভাগ ক্রীড়াসামগ্রী বের করতে সক্ষম হন। কিন্তু দ্বিতীয় তলায় থাকা ক্রীড়াসামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ইনস্যুরেন্স করা ছিল না বলে জানান গণি মিয়া। তিনি বলেন, তাই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা নেই। থানায়ও কোনো মামলা করেননি এই ভেবে যে, মামলা করে লাভ নেই।
এদিকে গতকাল গভীর রাতে পুরান ঢাকার ইসলামবাগে একটি রাসায়নিক গুদামে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আজ সকাল ছয়টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুরে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তা রাফি আল ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তদন্তের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।