তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার বর্ষপূর্তি: একটি মাঠও যেন হাতছাড়া না হয়

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে শোভাযাত্রা করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

শহরে উন্মুক্ত জায়গা, মাঠ কমে যাচ্ছে। যেগুলো আছে, সেগুলোও হাতছাড়া হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের বিকাশে এসব মাঠ, খোলা জায়গা দরকার। তেঁতুলতলা মাঠের মতো বাকি মাঠ ও উন্মুক্ত জায়গাও রক্ষা করতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে এক শোভাযাত্রা থেকে এসব কথা বলা হয়। তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আয়োজন করেন মাঠ রক্ষা আন্দোলনকারীরা।

কলাবাগানের তেঁতুলতলা নামে পরিচিত মাঠটিতে থানা ভবন করার কথা ছিল। কিন্তু মাঠটি রক্ষার দাবিতে গত বছর এলাকাবাসী, পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের আন্দোলনের মধ্যেই পুলিশ দেয়াল তৈরির কাজ সম্পন্ন করে। এরই মধ্যে মাঠটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে ১৩ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখে। পরে প্রতিবাদের মুখে মধ্যরাতে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলনের গতি আরও বাড়ে। ২৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন, জায়গাটিতে থানা হবে না।

এ আন্দোলনের মাধ্যমে মাঠ রক্ষার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করার কথা ছিল। তবে আগামীকাল এসএসসি পরীক্ষা থাকায় আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। পরে বড় পরিসরে আয়োজন হবে বলে জানানো হয়। বিকেলে এলাকার শিশুদের নিয়ে একটি ছোট শোভাযাত্রা করেন আয়োজকেরা।

মানবাধিকারকর্মী খুশি কবীর বলেন, এই মাঠ রক্ষার আন্দোলন সফল হয়েছে। তবে মাঠটি রক্ষার কাজ সহজ হয়নি। প্রতিবাদের মাধ্যমে মাঠটি রক্ষা করতে হয়েছে। সরকারকে তাঁরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে মাঠটি দরকার।

নিজেদের ন্যায্য দাবিগুলো রক্ষায় সবাইকে এক হতে হবে জানিয়ে খুশি কবীর বলেন,শিশুদের গড়ে ওঠার পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

তেঁতুলতলা মাঠের পাশে আজ পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখানে ঢুকতে এসে দেখা গেল, অনেক পুলিশ সদস্য। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু এখন ছোট পরিসরে হচ্ছে। তিনি বলেন, তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখার কিছু নেই। তাঁরা আইন মেনে চলেন।

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, এই ছোট বাচ্চারা যেন না ভাবে, ওদের হাত ধরার কেউ নেই। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তিনি বলেন, দুই পক্ষ থেকেই যোগাযোগ থাকতে হবে। মাঠের উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।

শিশু-কিশোরদের বিকাশে মাঠ, খোলা জায়গা দরকার।

স্থপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, নিজেদের অধিকার আদায়ে রাজার মতো ভাবতে হবে। উন্মুক্ত জায়গা, মাঠ, জলাধার কাউকে দখল করতে দেওয়া যাবে না। আর একটি মাঠও যেন হাতছাড়া না হয়। যেগুলো হাতছাড়া হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনা হবে।

মাঠ রক্ষার জন্য সোচ্চার হয়ে আটক হয়েছিলেন সৈয়দা রত্না। তিনি কিছুটা দুঃখ নিয়েই বলেন, এ পাড়ায় সাংস্কৃতিক চর্চা হচ্ছে না। মাঠটিকে ঘিরে এই চর্চা গড়ে উঠুক।

আজকের আয়োজনে শিশুরা ‘আমরা সবাই রাজা’ ও ‘আমরা করবো জয়’ গান দুটি গেয়ে শোনায়। এ আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী, উদীচীর সহসভাপতি জামশেদ আনোয়ার, বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। এ ছাড়া এলাকাবাসীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।