দাবার লড়াই চলছে দেশজুড়ে। জেলা শহরের স্কুলে স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি এখন দাবার অনুশীলনও সমানতালে চলছে। ক্লাসের ফাঁকে কিংবা টিফিনের বিরতিতে রাজা, মন্ত্রী, হাতি, ঘোড়া ও সৈন্যদের লড়াই শুরু হলে ক্লাসের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিও তখন হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী।
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে ও আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে চলছে ‘মার্কস অ্যাকটিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতা। ‘হয়ে ওঠো আগামীর গ্র্যান্ডমাস্টার’ স্লোগানে প্রতিযোগিতাটি দেশের স্কুলভিত্তিক দলগত দাবার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে দেশের সেরা খুদে দাবাড়ুদের। পরবর্তী সময় তাদের দাবাবিষয়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হবে।
প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছে ৬৪টি জেলার শিক্ষার্থীরা। স্কুলভিত্তিক দলগুলো শুরুতে খেলবে জেলা পর্যায়ে। এরপর জেলা পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে বিভাগীয় পর্যায়ে। তারপর বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয়, অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে। গত ২১ আগস্ট গাজীপুর থেকে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতাটির আরও কয়েকটি জোনের প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল পাওয়া গেছে।
শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় নোয়াখালী জেলার ৫৪টি স্কুল দাবা দল অংশ নেয়। সেখান থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানার্সআপ ও দ্বিতীয় রানার্সআপ দাবা দল নির্বাচিত হয়। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নোয়াখালী জেলা স্কুল। মকতুল হোসেনের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্য সদস্যরা হলো হাবিব বিন রায়হান, ওয়াসেক বিন রশিদ, আবদুল কাদির, মুজাহিদুল ইসলাম, পার্থ চক্রবর্তী ও আহসান কবির। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে বেগমগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল উচ্চবিদ্যালয়। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে নোয়াখালী জেলা স্কুলের আরেকটি দল। এ ছাড়া ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয় সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ী দলগুলোকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মো. সহিদুল ইসলাম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু প্রমুখ। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জ জেলার ৩২টি স্কুলের মধ্যে জুবায়ের জামানের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এস এম মডেল সরকারি হাইস্কুল। দলের অন্য সদস্যরা হলো ডেভলিন অধিকারী, তানভীর খান, মো. সাজিদ মাহমুদ, সামিউল ইসলাম ও প্রাপ্য বাড়ৈ। প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে যথাক্রমে এস এম মডেল সরকারি হাইস্কুল ও গোপালপুর পঞ্চপল্লী হাইস্কুলের দাবা দল। গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয় সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা। গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত হয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার মার্কস অ্যাকটিভ স্কুল চেস চ্যাম্পসের জেলা পর্যায়ের খেলা।
জেলার ৯টি স্কুল দাবা দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। মো. আতির রহমানের নেতৃত্বে দলের অন্য সদস্যরা হলো তাহমিদ জারিফ জয়, মো. মোত্তাসিম ফুয়াদ, মাহমুদ সাঈদ মাহিন, জুলফিকার পারভেজ জয়, আসরাক সাজিম ও আহাদুজ্জামান মুগ্ধ। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে রাজারহাট পাইলট উচ্চবিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ দাবা দল হলো কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত ২৯ ও ৩১ আগস্ট দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠেয় খেলাটি হয় সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে। সেরা ছয় খেলোয়াড় ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানার্সআপ ও দ্বিতীয় রানার্সআপ দাবা দলকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সামসুল আলম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক আবু মোহাম্মদ সায়েদ হোসেন প্রমুখ।
ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঝিনাইদহ জেলার আয়োজন। গত ২৯ ও ৩১ আগস্ট দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দলটির অধিনায়ক ছিল মো. মনোয়ার হোসেন। বাকি সদস্যরা হলো নূরানী হাই, মিসকাত রহমান, বিপ্রদীপ বিশ্বাস, তাসদিকুর রহমান, আনিয়াব মাহদী তাসনিম ও রাকিবুল হাসান। জেলায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছে শৈলকুপা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়। সেরা দল ও সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার সৈয়দ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু রাসেল, জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইসলাম আলমগীর, জেলা ক্রীড়া অফিসার মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
জেলার ৫২টি স্কুল দাবা দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিযোগিতা। পয়েন্টের ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়ন ও প্রথম রানার্সআপ হয়েছে বগুড়া জেলা স্কুলের দুটি দল। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। রুদ্র অরিজিৎ সাহার নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন দল বগুড়া জেলা স্কুলের অন্য সদস্যরা হলো মো. ইশতিয়াক হামিদ, রেদওয়ানুল মোস্তফা, মো. সবুর সরকার, কে এম সালমান ফার্সী ও রাগীব রনক। ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠেয় খেলাটি হয় সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে। খেলা শেষে সেরা তিন দল ও ছয় খেলোয়াড়কে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চট্টোপাধ্যায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মিলন প্রমুখ।
জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠেয় মার্কস অ্যাকটিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস প্রতিযোগিতায় টাঙ্গাইল জেলার ২৬টি স্কুল দাবা দল অংশ নেয়। সেখান থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সূতী ভি এম পাইলট মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। স্কুলটির নেতৃত্ব দিয়েছে মো. সাকিব আল অর্পূব। দলের বাকি সদস্যরা হলো মো. আল রিফাত তুরাগ, শাহ মুয়াজ্জিম শফী, মো. জিহাদ আহমেদ, মো. আশিক ও দেওয়ান রাশান। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় প্রথম রানার্সআপ এবং মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে। ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ী দল ও সেরা খেলোয়াড়দের পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গণি, জেলা পুলিশ সুপার সরকার মো. কায়সার, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মীর্জা মইনুল হোসেন লিন্টু প্রমুখ।
জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় নাটোর জেলার ২৫টি স্কুল দাবা দলের মধ্যে পয়েন্টের ভিত্তিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গ্রিন একাডেমি উচ্চবিদ্যালয়। স্কুলটির অধিনায়ক ছিল লক্ষ্মণ চক্রবর্তী। এ ছাড়া অন্য সদস্যরা হলো ইয়াকিন ইসলাম, ফাহাদ আলম ফাহিম, আতিকুর রহমান, ইমরান শেখ ও প্রেম কুমার দাস। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় হয়েছে দ্বিতীয় রানার্সআপ।
৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লীগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাটোর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহসীন আলী প্রমুখ।