শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা

রাজধানীতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৯ হত্যা মামলা

ছাত্র–জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাজধানীতে আরও নয়টিসহ সারা দেশে ১০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে একটি অপহরণ মামলা রয়েছে।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগের পর ৫ আগস্ট থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গতকাল পর্যন্ত ৭২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৬৬টি হত্যা মামলা। এসব মামলায় সাবেক অনেক মন্ত্রী–সংসদ সদস্য ছাড়াও আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এবং রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হওয়া নয়টি হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামিদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজধানীতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে পল্লবী, শাহবাগ, রামপুরা, হাতিরঝিল, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও যাত্রাবাড়ী থানায়।

এসব মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ অন্যদের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেন।

গত ১৯ জুলাই পল্লবী এলাকায় আকরাম খান রাব্বি (২৮) নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গত রোববার শেখ হাসিনাসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।

৫ আগস্ট রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ইসমামুল হক নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গত রোববার একটি হত্যা মামলা হয়েছে শাহবাগ থানায়।

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় তামিম শিকদার (১৩) নামের এক কিশোরকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৮৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে রামপুরা থানায়। ২৩ আগস্ট এ মামলা করেন তামিমের মা কোহিনূর। তামিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গত ১৯ জুলাই।

বাবু মোল্লা (১৮) নামে এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে হাতিরঝিল থানায় শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে রোববার আরও একটি মামলা হয়েছে। গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাবু মোল্লা।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা মাহমুদুর রহমানকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। রোববার এ মামলা দায়ের করেন নিহত মাহমুদুর রহমানের বাবা মাহবুবুর রহমান।

ইব্রাহিম নামে এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় একটি মামলা হয়েছে রোববার। ৫ আগস্ট ইব্রাহিম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

ইউনাইটেড ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইরফান ভূইয়া হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত শনিবার যাত্রাবাড়ি থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ইরফান ভূঁইয়া।

মনসুর আলী নামে এক তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। মনসুর আলী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গত ১৯ জুলাই।

ট্রাকচালক মো. হোসেনকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করেন নিহত মো. হোসেনের মা রিনা বেগম।

এদিকে শেখ হাসিনা, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতাকে অপহরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজশাহীর বাঘা থানায় এই মামলা করেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সালাউদ্দিন আহম্মেদ।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশে অন্য আসামিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০২৩ সালের ২১ মে বেলা দুইটার দিকে ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দিন আহম্মেদকে চোখমুখ বেঁধে তুলে নেওয়া হয়। শারীরিক নির্যাতনের পর ২৮ মে মিথ্যা মামলা দিয়ে সালাউদ্দিন আহম্মেদকে ঢাকার একটি আদালতে তোলা হয়।