সরকারের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ‘কাউয়া’ ঢুকেছে: সমাবেশে বক্তারা

রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
ছবি: প্রথম আলো

সরকারের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ‘কাউয়া’ ও ‘হাইব্রিড’ ঢুকেছে। যে কারণে প্রশাসনের সামনে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটছে। সরকার সাম্প্রদায়িক হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনো সরকার সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার না করায় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন না করায় সাম্প্রদায়িক হামলা অব্যাহত আছে।

শনিবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা। সমাবেশটির আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ক্ষমতাসীন দল সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা বাস্তবায়নের দাবিতে সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, বৈষম্য বিলোপ আইন ও দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইনের প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে সমাবেশে বলা হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ২২ অক্টোবর সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে গণ–অনশনের কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, সরকার সংখ্যালঘুদের নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে সোচ্চার হলে মৌলবাদীরা মনঃক্ষুণ্ন হবে, এ ভয়ে সরকার এগোতে চায় না। তাই প্রধানমন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তিনি কোন পক্ষে যাবেন। শেখ হাসিনা হাইব্রিড দ্বারা পরিবেষ্টিত আছেন এবং তাঁকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ঊষাতন তালুকদার।

ঐক্য পরিষদের আরেক সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, যার নেতৃত্বে আছেন শেখ হাসিনা, সেই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলা মোকাবিলা করলেও অধিকাংশ অঞ্চলে তা মোকাবিলা করতে পারছে না সরকার।

কোনো সরকারই সংখ্যালঘুদের কথা দিয়ে কথা রাখেনি বলে অভিযোগ করেন ঐক্য পরিষদের আরেক সভাতি নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, নির্যাতন বন্ধ করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা নির্যাতন বন্ধ না করলে সেই নির্যাতনকারী ও দায়িত্বশীলদের মধ্যে পার্থক্য থাকে না।

ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকারের মধ্যে সব কাউয়া ও হাইব্রিড ঢুকে গেছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), র‌্যাবের সামনে রামু থেকে গতকালের নড়াইল ও আজকে টাঙ্গাইলের ঘটনা ঘটছে। যেন আমরা পাকিস্তানে ফিরে গেছি।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, প্রিয়রঞ্জন দত্ত, শ্রী রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, শ্যামল কুমার রায়, কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত কোড়াইয়া, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সুনন্দপ্রিয় ভিক্ষু, হিন্দু মহাজোট (প্রভাস-পলাশ) নির্বাহী সচিব পলাশ কান্তি দে, হিন্দু লীগের মহাসচিব শ্রী শংকর সরকার, মাইনরিটি রাইট ফোরাম বাংলাদেশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পবিত্র মিস্ত্রি, জাতীয় হিন্দু মহাজোট (সোনালী-এম রায়) সভাপতি সোনালী দাশ, বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরামের সভাপতি শ্রী রামানন্দ দাশ প্রমুখ।

সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল সঞ্চালনা করেন ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর হালদার।