দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি চলতি বছর এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ নিয়ে চলতি মাসের ২৪ দিনে ডেঙ্গুতে ১৪৪ জনের মৃত্যু হলো। চলতি বছর এক মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও এটি। গত মাসে ডেঙ্গুতে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ সময় ডেঙ্গুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় পাঁচজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় চারজন ও খুলনা বিভাগে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আজ সকাল আটটা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় ঢাকা বিভাগের (ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বাদে) বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে সর্বোচ্চ ২৭২ জন ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৯৪, খুলনা বিভাগে ১৪৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৩, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১২১, বরিশাল বিভাগে ৯৭, রাজশাহী বিভাগে ৫৮, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৫, রংপুর বিভাগে ১৭ এবং সিলেট বিভাগের হাসপাতালে ৯ জন ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮৬ হাজার ৭৯১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত মাসে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪ হাজার ৯৭৪ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন ডেঙ্গু সংক্রমণ যে রূপ নিয়েছে, তাতে জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সরকার এটা বুঝতেই চাইছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গতানুগতিক ধারায় কাজ করে চলেছে। তাদের বোধ না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে হয় না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গত বছর। তখন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৪ জন নারী ও ২২৫ জন পুরুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। এ সংখ্যা ১৩ হাজার ১০৩। তবে ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের। এই বয়সী ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।
এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি, ১৯৭ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৮২ জনের।
বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর ডেঙ্গু শনাক্ত করার কাজটি একেবারেই হচ্ছে না। প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ঘাটতি থাকায় রোগী বুঝতেও পারছে না যে সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর রোগীর শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে এবং দ্রুত মৃত্যু ঘটছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।