রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ একটি ফ্রিজিং ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন মোহাম্মদ সুমন। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে ওই ফ্রিজার ভ্যান থেকে সুলভ মূল্যে এক কেজি গরুর মাংস, এক কেজি ব্রয়লার মুরগি, এক লিটার দুধ ও এক ডজন ডিম কিনেছেন তিনি।
সুমন বলেন, ‘এই বছর আজ আমার বাসায় প্রথম গরুর মাংস রান্না হবে। গত কোরবানির ঈদের পর বাসায় গরুর মাংস রান্না হয়েছিল কি না, মনে পড়ছে না।’
আজ শনিবার সকালে মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ওই গাড়ি থেকে পণ্য কিনতে এসেছিলেন অনেকেই। রীতিমতো লাইন লেগে গিয়েছিল। লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন সুমনও।
সুমন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রিং রোডে বেসরকারি একটি ব্যাংকে নিরাপত্তাপ্রহরীর কাজ করেন। বাসা জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়। স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুমনের সংসার। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। সেই হিসাবে, দৈনিক আয় ৩৩৪ টাকা।
মাংস এখন আর কিনি না বললেই চলে। কিনব কীভাবে, যা দাম। মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। রোজার মাসে এখানে একটু কমে পাচ্ছি, তাই মাংস কিনলাম।ফজিলা বেগম, ক্রেতা।
এখন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়; অর্থাৎ এক কেজি গরুর মাংস যে দামে বিক্রি হচ্ছে, সুমন দুই দিন কাজ করে তার চেয়ে কম টাকা বেতন পান।
সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছি। তিন বছরে জিনিসপত্রের দাম যে কতবার বেড়েছে, তার কোনো হিসাব নাই। দাম বেড়েছে, কিন্তু বেতন বাড়েনি।’
ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানটিতে পণ্য বিক্রি করছিলেন ফাহাদ সাকিব। তিনি বলেন, ভ্যানে ১০০ কেজি গরুর মাংস, ১০ কেজি খাসির মাংস, ৬০ কেজি ব্রয়লার মুরগি, ১ হাজার ২০০টি ডিম ও ২০০ লিটার দুধ আনা হয়েছে। এখানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস ৯৪০, চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ৩৪০, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও প্রতিটি ডিম ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ক্রেতারা চাইলে আধা কেজি মাংসও কিনতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গরু ও খাসির মাংস কেনার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। বেলা সোয়া ১১টার মধ্যে সব গরুর মাংস বিক্রি হয়ে গেছে। খাসির মাংস শেষ হয়েছে তারও আগে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস ৯৪০, চামড়া ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ৩৪০, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও প্রতিটি ডিম ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে ক্রেতারা চাইলে আধা কেজি মাংসও কিনতে পারছেন।
ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যানে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতাদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। তাঁরা লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছিলেন। সেখানে ছিলেন ফজিলা বেগম। তিনি সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামী গাড়িচালক। দুই মেয়েসহ পরিবারে সদস্য চারজন।
এক কেজি গরুর মাংস, এক ডজন ডিম আর এক লিটার দুধ কিনে বাসায় ফেরেন ফজিলা বেগম। খরচ হয় ৮৪০ টাকা। ফজিলা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাংস এখন আর কিনি না বললেই চলে। কিনব কীভাবে, যা দাম। মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। রোজার মাসে এখানে একটু কমে পাচ্ছি, তাই মাংস কিনলাম।’
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে রাজধানীর ২০টি জায়গায় ফ্রিজিং ভ্যানে করে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। জায়গাগুলো হলো নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি, খামারবাড়ি, আজিমপুর মাতৃসদন, গাবতলী, দিয়াবাড়ি (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি, ৬০ ফুট রোড, খিলগাঁও (রেলক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আবদুল গণি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ, রামপুরা, কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বছিলা, হাজারীবাগ (সেকশন), লুকাস মোড় (নাখালপাড়া), নয়াবাজার (পুরান ঢাকা) ও কামরাঙ্গীরচর। ২৮ রমজান পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালু থাকবে।