‘বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ শীর্ষক এক সংলাপে আলোচকেরা। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এর আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল
‘বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ শীর্ষক এক সংলাপে আলোচকেরা। আজ রাজধানীর একটি হোটেলে এর আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সংলাপ

নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বিদ্যমান আইন ত্রুটিপূর্ণ, সংস্কারের প্রস্তাব

বিদ্যমান আইন দিয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনেরা।

‘বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মত দেন। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে।

নির্বাচন কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, যত ভালো কমিশন গঠন হোক, ভালো নির্বাচন করতে হলে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন। তিনি তিন স্তরের একটি সার্চ কমিটির প্রস্তাব করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দায়মুক্তির বিধান যুক্ত করে ২০২২ সালের প্রণীত আইনে যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এর আগের নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করেছে, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। তিনি জানান, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠনে তাঁর কমিটি প্রস্তাব করবে।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক আবদুল আলিম উপস্থাপিত পলিসি ব্রিফে (নীতি প্রস্তাবনা) বলেন, যেকোনো নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন কমিশন নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকেই শুরু হয়। স্বাধীন কমিশন গঠনে তিনি এ সময় সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসহ আরও বক্তব্য দেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিবষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমের কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচনা পর্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, কমিশন গঠনে দল ছোট না বড়, তা দিয়ে মতামত বিচার করা যাবে না।

গণ অধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট নুরুল হক নুর প্রস্তাব করেন, সাত শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের সার্চ কমিটি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ আনুপাতিক হারে নির্বাচনব্যবস্থার কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নবীন–প্রবীণের সমন্বয়ে আগামীর নির্বাচন কমিশন দেখতে চান।

বিএনপির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সহকারী সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে পাওয়া নাম নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলের কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর সবচেয়ে বড় অংশীজন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটি বাতিল করা। তিনি আরও বলেন, এমনভাবে কমিশন গঠনপ্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে, যাতে কোনো সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, স্থায়ী সমাধান এখন চিন্তা না করে কী করে পরবর্তী নির্বাচন ভালো করা যায়, সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিচার বিভাগকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্ত করা ‍উচিত হবে না। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ কমিশন দায়িত্ব পালন না করলে তাকে আইনের আওতায় আনার তাগিদ দেন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা নয়, বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক রওনক জাহান। স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল ওল্ডস।