প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিএমএএনএ আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিক কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দিয়েছে। অনুষ্ঠানের মঞ্চে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনসহ অতিথিরা
প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিএমএএনএ আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিক কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দিয়েছে। অনুষ্ঠানের মঞ্চে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনসহ অতিথিরা

ডাক্তারি পেশা ওপরওয়ালার একটা আশীর্বাদ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডাক্তারি পেশাকে ‘ওপরওয়ালার আশীর্বাদ’ বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। তিনি আজ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে আধুনিক কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম উপহার দিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (বিএমএএনএ)৷ এসব সরঞ্জাম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন এসব কথা বলেন। আজ দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মিলন মিলনায়তনে চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠান হয়। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএমএএনএ চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সঙ্গে মিলে প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞানের আদান-প্রদানের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই আওতায় ঢাকা মেডিকেলকে চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া হলো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জন সামন্ত লাল সেন।

মন্ত্রী এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে। ডাক্তারি পেশা ওপরওয়ালার একটা আশীর্বাদ। সবাই ডাক্তার হতে পারে না। সেই আশীর্বাদ নিয়ে তোমরা ডাক্তারি পড়তে আসছ। তোমরা মানুষের সেবা দিয়ে যাও। তোমরা দেখবে, একদিন অনেক বড় হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের মতো পেছনে দাঁড়িয়ে অনেক স্লোগান, চিৎকার ও হাততালি দিয়েছি। ওই জায়গা থেকে আমি এখানে এসে যদি আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতে পারি, তো তোমাদের মধ্যেও অনেকে একদিন এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। তোমরা ওইভাবে কাজ করো, সেবা দাও।’

চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তরের পর মন্ত্রী বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে এসে আমি খুবই খুশি হয়েছি। বিএমএএনএর উদ্দেশ্য মহৎ। বিএমএএনএ কোভিডের সময় যে সাহায্যটা করেছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তাদের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশে কোভিড সামলানো খুব দুষ্কর ছিল।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী ও বিএমএএনএর নেত্রী ফেরদৌসী শিল্পী তাঁর কাছে বলেন, ভুল চিকিৎসার জন্য কোনো চিকিৎসককে বিনা বিচারে হত্যা করা না হয়, সেটি যেন তিনি কঠোরভাবে দমন করেন। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেখার প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে আমার। আবার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে রোগীদের সুরক্ষাও দেখতে হবে। রোগীদের সুরক্ষা নিয়েও কাজ করতে হবে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা সারা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জন্য হতে পারে না। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব জায়গায়ই হয়। এ জন্য বাংলাদেশের সব চিকিৎসক খারাপ নন। এখন বাংলাদেশে বাইরে থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা নেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কত কষ্ট করে কাজ করেন। আমার থেকে বেশি...আমি বহু বছর ধরে এই চত্বরে। আমি একবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলছিলাম, “আপা, ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে কাজ করে, রোগীদের যেভাবে সেবা দেয়, আমার তো মনে হয় ওদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।”’

সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সব সময় শুধু বদনাম করলে হবে না। এখানে জরুরি বিভাগে মাত্র এক-দুজন মেডিকেল অফিসার থাকেন। হঠাৎ করে এত রোগী! এই চাপ সামলানো যে কী জিনিস, আমি রন্ধ্রে রন্ধ্রে জানি।’

মন্ত্রী হবেন, তা জীবনেও ভাবেননি উল্লেখ করে সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমি একটা অন্য রকম জীবন যাপন করতাম। হাসপাতালে এসে কাজ করতাম, বাসায় যেতাম, ভাত খেতাম, ঘুমাতাম, জি-বাংলার নাটক দেখতাম—এই ছিল আমার জীবন। সেখান থেকে আজ আমি মন্ত্রী! একটা বিরাট জিনিস। তবে একটা কথা বলি, আমি আগে যা ছিলাম, এখনো থাকব, ভবিষ্যতেও আমি তা-ই থাকব। আমার দরজা খোলা। সাধারণ ডাক্তারদের জন্য আমার দরজা সব সময়ই খোলা থাকবে। আমার কাছে যে কেউ সব সময় আসতে পারবেন। সাধারণভাবেই আমি চলব, আমি কোনো অসাধারণ ব্যক্তি হয়ে থাকব না।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএমএএনএর সভাপতি আয়েশা সিকদার।

আয়োজনে ৫০ হাজার টাকা বেঁচে গেছে

সাধারণত কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা গেলে যে ধরনের আড়ম্বর চোখে পড়ে, ঢাকা মেডিকেলের ডা. মিলন মিলনায়তনে চিকিৎসা সরঞ্জাম হস্তান্তরের এই আয়োজন ছিল তার অনেকটা বিপরীত। ছিল না মঞ্চ জমকালো করে সাজানো বা ফুলেল শুভেচ্ছার মতো কোনো বিষয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সদ্য সাবেক উপাধ্যক্ষ আবদুল হানিফ বলেন, ‘একজন সাধারণ, কিন্তু অসাধারণ মানুষ (সামন্তলাল সেন) বাহ্যিক আড়ম্বর পছন্দ করেন না। সাজসজ্জা না করায় আমাদের প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেঁচে গেছে। তার থেকে ২০ হাজার টাকা সেন স্যারের হাতে দেব। তিনি পরিচালকদের দুজন বার্ন রোগীর চিকিৎসায় টাকাটা দেবেন। আপনাদের কী মনে হয় না, ফুলের পেছনে ১০ হাজার টাকা খরচ না করে একটা গোলাপ বা রজনীগন্ধা দিই এবং বাকি টাকাগুলো গরিব রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করি! স্মার্ট বাংলাদেশ মুখে বললে সেটা আমাদের কাজেও করতে হবে।’ পরে সামন্ত লাল সেনের হাতে তিনি ২০ হাজার টাকা তুলে দেন।

বর্তমান উপাধ্যক্ষ দেবেশ চন্দ্র তালুকদার বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে আমরা অতিরঞ্জিত কিছু করিনি। স্যারের (মন্ত্রী) জন্য লালগালিচা সংবর্ধনার ব্যবস্থা করিনি। আগে অনুষ্ঠানে মন্ত্রীরা এলে সোনারগাঁও হোটেল থেকে খাবার আনতে হতো; অনেক সময় এমন নির্দেশনাও আসত। অবশেষে আমরা এ থেকে বের হতে পারলাম।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও প্রতিনিধিদের হাতে ইকোকার্ডিওগ্রাম, পোর্টেবল আলট্রাসাউন্ড, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, এন্ডোস্কোপসহ আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিনিধিদের হাতেও সরঞ্জাম তুলে দেওয়া হয়। এই আয়োজনের আগে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও আলোচনাপর্ব ছিল একই মিলনায়তনে।