সিটি করপোরেশনের সড়ক খনন করতে হলে সংস্থাটির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তা না করে বরং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে রাস্তা খনন শুরু করে ঢাকা ওয়াসা। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ঢাকা ওয়াসার মালামাল জব্দ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
এ ঘটনায় রাজধানীর লালবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে ঢাকা ওয়াসা দাবি করেছে, লালবাগ এলাকায় তারা রাস্তা খননের কোনো কাজ করছে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংস্থাটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাগের শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠসংলগ্ন এলাকায় রাস্তা খনন করছিল ঢাকা ওয়াসা। এ বিষয় নজরে এলে করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে রাস্তা খননকাজে নিয়োজিত লোকজনের কাছে অনুমতিপত্র দেখতে চান এবং তাঁরা তা দেখানও। সেখানে আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের স্বাক্ষর দেখা যায়। কিন্তু তাঁদের সন্দেহ হওয়ার তাঁরা মিঠুন চন্দ্রের কাছে পাঠান। তখনই বেরিয়ে আসে ঢাকা ওয়াসার জালিয়াতি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখেন তাঁর স্বাক্ষর জাল করে ওয়াসার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ভুয়া অনুমতিপত্র দেখিয়ে সেখানে রাস্তা খনন করছিলেন।
ততক্ষণে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়েন খননকাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার কর্মী ও তদারকিতে থাকা লোকজন। পরে খননকাজে ব্যবহৃত মালামাল জব্দ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
জব্দ করা মালামালের মধ্যে দুটি জেনারেটর, একটি ড্রিল মেশিন, দুটি অ্যালুমিনিয়াম বোল, দুটি সাবল, একটি কোদাল, একটি এলইডি লাইট ও পাঁচটি হেলমেট রয়েছে।
জানা যায়, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের আওতাধীন লালবাগ খেলার মাঠসংলগ্ন (শহীদ আবদুল আলীম খেলার মাঠ) পানির মেইন লাইনে ইলেকট্রনিক প্রেশার রিডিউসিং ভালভ (ই-পিআরডি) স্থাপন কাজের জন্য রাস্তা খননের অনুমতি চায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। করপোরেশনের ওয়ান–স্টপ সেল থেকে এই অনুমতি দেওয়া হয়। গত ২১ এপ্রিল করপোরেশনের অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল স্বাক্ষরিত একটি অনুমতিপত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের (রক্ষণাবেক্ষণ) নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মোস্তাকিম হোসেন বরাবর পাঠানো হয়। অনুমতিপত্রে ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল সময় দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তা খননের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ওয়াসা ২৯ এপ্রিল সময় বাড়ানোর (২৩ মে পর্যন্ত) আবেদন করে। ৩০ এপ্রিল আবেদনটি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আসে।
পরে পবিত্র ঈদুল আজহা ও অন্যান্য বিষয়াদির কথা উল্লেখ করে ওই সময় রাস্তা খনন করা যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও অনুমতি ছাড়াই ঢাকা ওয়াসা দুবার রাস্তা খননের উদ্যোগ নেয়। তারপর বাধ্য হয়ে অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী গত ২০ মে ওয়াসাকে চিঠি দিয়ে জানায় রাস্তা খনন করা যাবে না।
এমতাবস্থায় আজ বেলা আড়াইটা নাগাদ করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে খবর আসে যে ওয়াসা সেখানে রাস্তা খনন করছে।
এ বিষয়ে অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীল বলেন, ‘যেহেতু আমার স্বাক্ষর জাল ও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে মামলা করা হবে।’
এ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা তারেক প্রথম আলোকে বলেন, লালবাগ এলাকায় ঢাকা ওয়াসা রাস্তা খননের কোনো কাজ করছে না। অন্য কোনো সংস্থা করতে পারে। ওয়াসাকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে যে সংবাদ আসছে, এটি ভুল তথ্য বলেও দাবি করেন তিনি।