পয়লা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের মন্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে উদীচী শিল্পগোষ্ঠী। সরকারের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের বক্তব্য দুঃখজনক বলে মনে করে উদীচী। আজ সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, জননিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের জারি করা নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান আয়োজন অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। পয়লা বৈশাখের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর অনুষ্ঠান করা ছিল হঠকারী ও দুঃখজনক। তাদের এ আচরণে সরকার খুবই ব্যথিত ও মর্মাহত।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, উদীচীর বর্ষবরণ আয়োজন নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য তাঁদের নজরে এসেছে। বর্ষবরণে উদীচীর আয়োজন দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে প্রতিমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তাতে বিস্মিত উদীচী। যেকোনো বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো ও সংগঠিত হওয়া জনগণের সংবিধানসম্মত অধিকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আয়োজনের সময় সংকোচন করতে সরকারের নির্দেশের প্রতিবাদে অনুষ্ঠান আয়োজন করে উদীচী সেই সংবিধানসম্মত অধিকারের চর্চা করেছে। একইভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বর্ষবরণের দিন বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করেছে।
এবার দেশব্যাপী বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও পয়লা বৈশাখ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় ‘সংকোচনের’ প্রতিবাদে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টার পর রাজধানীর শাহবাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
বিবৃতিতে বলা হয়, উদীচী সব সময় মনে করে, আবহমান বাংলার সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পয়লা বৈশাখ বা বাংলা বর্ষবরণ। বহু বছর ধরে এই উৎসবের বিরুদ্ধে মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। কোনো ঝুঁকি নেই বলে জানালেও নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অবস্থানের সাযুজ্য রয়েছে।
বিবৃতিতে উদীচীর নেতারা বলেন, বর্ষবরণ উৎসবকে নির্দিষ্ট সময়ের ঘেরাটোপে বেঁধে দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুই নয়। এর মাধ্যমে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিবিরোধী অন্ধকারের শক্তিকেই আশকারা দেওয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু পয়লা বৈশাখ নয়, সারা বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজ সংস্কৃতির ধারক-বাহক নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলেও প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। এ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও সংস্কৃতিবান্ধব হিসেবে দাবিদার সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের বাধা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।