বাংলা সাহিত্যের মর্যাদা বা সাহিত্যিকদের অর্জন সম্পর্কে বিদেশি পাঠকেরা জানেন না। বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের সাহিত্য অনুবাদ করা হলে তা হতো বড় অর্জন। এই মত বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের।
সেলিনা হোসেন বলেন, বাঙালি প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করছে। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘ অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে—বিদেশি পাঠকেরা সেটা জানেন। কিন্তু বাংলা সাহিত্য অনূদিত না হওয়ায় বিদেশি পাঠকেরা তা পড়তে পারেন না।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। ছয়টি বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা সংস্থা অমর প্রকাশনী এ আয়োজন করে। সেখানে সেলিনা হোসেন ছিলেন প্রধান অতিথি।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে যেদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়, সেদিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সেমিনারে ছিলেন সেলিনা হোসেন। দিনটির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ওই সেমিনারে থাকা বিদেশি সাহিত্যিকেরা আমাকে বললেন, আপনারা তো বাংলা সাহিত্য অনুবাদই করেন না। আপনাদের জন্য যে একটি দিনকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করা হলো, বিদেশি পাঠকেরা কী করে বুঝবেন যে আপনাদের সাহিত্যের মর্যাদা কী আর আপনাদের লেখকদের অর্জন কত?’
সেলিনা হোসেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমিতে প্রায় ৪০ বছর চাকরি করলাম। অনেককে বলেছি, আমাদের সাহিত্যের অনুবাদের ব্যবস্থা করুন। সাতচল্লিশ–পরবর্তী সময়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, শওকত ওসমান, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদদের সাহিত্য অনুবাদ করতে পারলে তা হতো বড় এক অর্জন। আমরা সেই জায়গা ধারণ করিনি।’
কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ—সাহিত্যের সব শাখায় অনুবাদ প্রয়োজন বলেই মনে করেন সেলিনা হোসেন। তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতা নিজে ইংরেজিতে অনুবাদ করে “গীতাঞ্জলি” বই বের করেছিলেন। বইটি জমা দিয়ে তিনি ১৯১৩ সালে পান নোবেল পুরস্কার। তাঁর পরে বাংলা সাহিত্যের আর কেউ এ ধরনের বড় কাজ করতে পারেননি।’
বই প্রকাশের এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন। সেখানে আরও কথা বলেন সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, নাট্যব্যক্তিত্ব শঙ্কর শাওজাল, প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহা, ভারতের কলকাতার ইন্দো–বাংলা প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা পরিতোষ পাল, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাহেদ মন্তাজ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন হওয়া ছয়টি বই হলো অমর সাহার ‘প্রথম আলোয় কলকাতার দুই যুগ’, মোহাম্মদ আবদুল মজিদের ‘দেশ সমাজ ও সাহিত্য’ ও ‘সম্মোহিত সমকাল’, সাহেদ মন্তাজের ‘আরাধ্য কান্তা’ এবং সালেহা ইভার ‘বিন্দু বিন্দু জলকণা’ ও ‘যদি কখনো হারিয়ে যাই’।