ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় গভীর রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। উপাচার্য তাঁদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে তিনটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাত ১টার পর ক্যাম্পাসে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা শহরে বাড়িতে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা। ওই ফেসবুক পোস্টে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নিপীড়নের অভিযোগ করেন। ওই পোস্টে একজন সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়ে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগও করেন ফাইরুজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আজ শনিবার দুপুরের মধ্যে শাস্তির দাবি করেন। পরে উপাচার্য ক্যাম্পাসে এলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপাচার্যকে ক্যাম্পাসের ভেতরে যেতে দিতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করে। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানের পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন উপাচার্য। এরপর তিনি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
ফাইরুজের আত্মহত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে উপাচার্য সাদেকা হালিম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আমাকে দেওয়া ক্ষমতায় অভিযুক্তদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। এই ঘটনার সকল বিষয়ে আমলে নিয়ে, তদন্ত ব্যাপক পরিসরে করব। যারা দায়িত্ব অবহেলা করেছে তাদের চিহ্নিত করা হবে। আর প্রতিবেদন পাওয়া মাত্র তাদের বহিষ্কারের ব্যবস্থা নিব। দ্রুত সময়ে সবকিছু হবে।’
এর আগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ফাইরুজের ওই সহপাঠীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং ওই সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অভিযুক্ত ছাত্রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ওই সহকারী প্রক্টর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাটি দুই থেকে দেড় বছর আগের, তখন অবন্তিকার বিরুদ্ধে তার সহপাঠীরা ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে থানায় জিডি করেছিল। ওই অভিযোগ তদন্তে আমাদের এখানে একটি কমিটি করা হয়েছিল। তার সঙ্গে কখনোই আমি একা কিছু করিনি।’
মেয়েটির আত্মহত্যা এবং সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন।