ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হলেও ঢাকা শহর বাসযোগ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরের বিআইপি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘পরিকল্পিত জনঘনত্ব, বাসযোগ্য নগর ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে মোহাম্মদ ফজলে রেজা বলেন, ঢাকা শহরের বর্তমান অবস্থার জন্য শুধু রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দোষ দিলে হবে না; সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, পেশাজীবীদেরও দায় নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অনেক পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন না হওয়া ও পরবর্তী সময়ে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা শহর বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। রাজশাহী শহরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই শহর নিয়ে করা মহাপরিকল্পনার (২০০৪-২০২৪) প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাস্তবায়নের কারণেই রাজশাহী শহর পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ঢাকা শহরও বাসযোগ্য হবে যদি ড্যাপের (২০২২-২০৩৫) ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়।
অনুষ্ঠানে রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা শহরকে দেখতে তিনি ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে চান। এ জন্য প্রতি তিন মাস অন্তর পেশাজীবীসহ অন্য অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে পাওয়া সুপারিশ অনুযায়ী ড্যাপ বাস্তবায়নে কোন কাজ আগে করতে হবে, সেটি ঠিক করা হবে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হবে। সারা দেশে পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য শহর ও গ্রামীণ এলাকার জন্য সমন্বিতভাবে পরিকল্পনার প্রতি জোর দেন রাজউক চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমাতে ঢাকা শহরের ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ছোট শহরগুলোয় উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও মানসম্মত শিক্ষাসুবিধা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আলী আখতার হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে মোট কত কিলোমিটার রাস্তা হবে, তার একটি সীমা থাকা উচিত। আমাদের যতটুকু রাস্তা আছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে চাই। নতুন করে আর রাস্তা নির্মাণ করতে চাই না।’ টিআর, কাবিখার মতো প্রকল্পকে কৃষিজমি নষ্টের জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিজমিতেও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিকল্পিত নগরায়ণে নগর–পরিকল্পনাবিদদের গুরুত্ব তুলে ধরে মো. আলী আখতার হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়েও নগর–পরিকল্পনাবিদ থাকতে হবে। কারণ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নগর–পরিকল্পনাবিদেরা সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। তিনি বলেন, সারা দেশের জন্য জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা করতে হবে। এটি না করে শুধু ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কত হবে, তা নিয়ে বিতর্ক করলে কাজ হবে না। সারা দেশে যে হারে নারায়ণ হচ্ছে, তাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে একসময় পুরো দেশ বাসের অযোগ্য হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা ঢাকা শহরের নগরায়ণ নিয়ে লজ্জা পাই। কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে একসময় পুরো দেশ নিয়েই লজ্জা পেতে হবে।’ তিনি দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। বিআইপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নগর-পরিকল্পনা নিয়ে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ার জন্য বিআইপিকে একটি প্লট দেওয়ার জন্য রাজউক চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন। রাজউক চেয়ারম্যানও বিআইপিকে একটি প্লট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশ্ব নগর-পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষে বিআইপি আয়োজিত এই সেমিনারে নগর–পরিকল্পবিদসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।