রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের সঙ্গে আইন–শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শান্তিনগর মোড় থেকে পূর্বদিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশ থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজনের হাতে পিস্তল দেখা গেছে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া চলছে।
এর আগে শান্তিনগর মোড় অবরোধ করে ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটা থেকে শান্তিনগর মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে ক্ষমতাসীন দলের হামলার মুখে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে সরে শান্তিনগর মোড়ে এসে জড়ো হন। শান্তিনগর মোড়েও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটেন। শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানও গিয়েছিল। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ওই যানটি শান্তিনগর এলাকা থেকে চলে যায়।
শান্তিনগর মোড়ে অবস্থানরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আহমদুল হাসান জানিয়েছেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল, উইলস লিটলস ফ্লাওয়ার, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ, শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজ, তেজগাঁও কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী শান্তিনগর মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এই মোড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকজন অভিভাবকও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নাসরিন আক্তার নামের একজন অভিভাবক প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা হচ্ছে, তাতে আমার সন্তানও নিরাপদ নয়। এ কারণে তার ইন্টারপড়ুয়া এক মেয়ে এবং অনার্সপড়ুয়া আরেক মেয়েকে নিয়ে তিনিও কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
আরেকজন অভিভাবক মোসাম্মত সিলভিয়া বলেন, তাঁর মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী গার্লসে ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। মেয়ে কান্না করছিল আন্দোলনে যাব। সে বলছে, তার সহপাঠীদের মেরে ফেলা হচ্ছে। সে এর প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় যাবে। পরে মেয়েকে নিয়ে নিজেও আন্দোলনে এসেছেন। এই অভিভাবক আরও বলেন, এভাবে পাখির মতো একটা শিক্ষার্থীদের গুলি করে মারার পর আমরা কি ঘরে বসতে পারি!
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নাইটিঙ্গেল মোডে উইলস লিটলস স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। পরে ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তোলার পর আরামবাগের বিভিন্ন বিভিন্ন অলিগলিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আরামবাগ এলাকার বিভিন্ন হোস্টেলে ঢুকেও ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা-মেধা মেধা, তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার, আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে। ঢাবিতে রক্ত কেন প্রশাসন জবাব চাই, জাবিতে রক্ত কেন প্রশাসন জবাব চাই, জবিতে রক্ত কেন, প্রশাসন জবাই চাই ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগান দিচ্ছে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগ হামলার আন্দোলনকারীদের নানা গলি থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। তবে শিক্ষার্থীরা মানব ঢাল তৈরি করে এর প্রতিরোধ করে যাচ্ছেন।
শান্তিনগর মোড়ে চলা আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে অভিনেতা আরস খান গিয়ে সংহিত জানিয়েছেন। বেলা একটা থেকে চলা এই কর্মসূচিতে অনেক অভিভাবককে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য বাসা থেকে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে দেখা গেছে।