একটি জনপদ শহর না গ্রাম, তার মূল পার্থক্যই সেই জনপদে জনসংখ্যার আকার ও ঘনত্ব। ছোট, মাঝারি ও বড় শহর থেকে শুরু করে মেট্রো সিটি ও মেগা সিটির ক্ষেত্রেও পার্থক্য গড়ে দেয় এই দুই বিষয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরের আকার বড় হয়, পেশার বৈচিত্র্য আসে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ে, পুঁজির সন্নিবেশ হতে থাকে, চক্রাকারে যা শহরকে আরও বড় হতে সাহায্য করে।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯-এ বলা আছে, কোনো এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা ন্যূনতম ৫০ হাজার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১ হাজার ৫০০ জন হতে হয়। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুসারে, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান পৌর এলাকার জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘনত্বকে যথাযথ বিবেচনায় রাখতে হবে। ফলে দেশের প্রচলিত আইনে নগর প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নগর-পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার মূলে আছে জনঘনত্বের বিষয়টি।
ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) বা ড্যাপেও জনঘনত্বের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। আর এই জনঘনত্ব ব্যবস্থাপনা এবং ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর)’ নিয়েই বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, যা একটু বিশদভাবেই বোঝা প্রয়োজন।
খুব সহজে বোঝার জন্য একটা উদাহরণ দিই। ধরা যাক, এক হাজার বর্গফুটের একটি বাসায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার ও একজন গৃহকর্মী থাকেন। কিছুদিন পর আত্মীয় এলেন দুজন, গ্রাম থেকে পরিচিত লোক এলেন আরও দুজন; অর্থাৎ ওই বাসায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে হলো ১০। এখন এই ১ হাজার বর্গফুটের বাসায় নিয়মিতভাবে ১০ জনের স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব কি না? কারণ, ঘুমানো ছাড়াও রান্না, খাওয়া, গোসল, প্রাকৃতিক কর্ম ইত্যাদির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা প্রয়োজন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, এক হাজার বর্গফুটের একটা বাসার ধারণক্ষমতারও একটা সীমা আছে এবং উপযুক্ত জীবনমান অনুযায়ী ভালোভাবে থাকতে চাইলে সেই ধারণক্ষমতার সীমার নিচে লোকসংখ্যা থাকতে হবে।
এখন দেখা যাক, পাড়া বা মহল্লার ক্ষেত্রে কী ঘটে। পরিকল্পিত কোনো পাড়া-মহল্লার নকশায় ২০, ২৫, ৩০ বা ৪০ ফুটের রাস্তাসহ অন্যান্য সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে, যা বেশ কিছু সমীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক হিসাব কষে নির্ধারণ করা হয়। পরিকল্পিত ওই এলাকার জন্য প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ‘অনুমিত জনসংখ্যা’ ও ‘জনঘনত্ব’ নির্ধারণ করার পর সেই অনুযায়ী সেখানে প্লট বা ফ্ল্যাটের পরিমাণ এবং পরিমাপ নির্ধারণ করে রাস্তাসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা দেওয়া হয়।
ধরা যাক, একরপ্রতি জনসংখ্যা নির্ধারণ করা হলো ৩৫০ জন। তাহলে ১০ একরের একটি এলাকার জন্য অনুমিত জনসংখ্যা হবে ৩ হাজার ৫০০। এখন যদি সেখানে অন্য নাগরিক সুবিধা দেওয়ার পর ৩ কাঠার সর্বোচ্চ ১২০টি প্লটের সুযোগ রাখা হয় এবং প্রতিটি প্লটে ১ তলা বাড়ি সাপেক্ষে ১০ জন করে থাকতে পারেন, তবে মোট জনসংখ্যা হবে ১ হাজার ২০০। যদি সব প্লট ২ তলা হয়, তবে মোট জনসংখ্যা হবে ২ হাজার ৪০০, ৩ তলা হলে ৩ হাজার ৬০০, ৪ তলা হলে ৪ হাজার ৮০০, ৫ তলা হলে ৬ হাজার এবং ৬ তলা হলে ৭ হাজার ২০০ জন।
তিনতলাতেই ওই এলাকার অনুমিত জনসংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে এবং ছয়তলাতেই তা দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাস্তাসহ অন্যান্য সুবিধা দ্বিগুণ হচ্ছে না। ফলে বিদ্যমান চলাচলের জায়গা; পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নর্দমা, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি পরিষেবাসহ পার্ক; খেলার মাঠ; অন্যান্য নাগরিক সুবিধা কমে যাবে। গণহারে ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করতে দিলে বিদ্যমান অবকাঠামো ও পরিষেবায় দ্বিগুণ চাপ পড়বে। আর এর চেয়ে বেশি বাড়ি নির্মাণ করতে দিলে কী হবে, তা বলাই বাহুল্য। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই নতুন ড্যাপে জনঘনত্ব বিন্যাসের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে এবং এলাকাভিত্তিক এফএআরের মানের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় যাতে ওই এলাকার ধারণক্ষমতা অনুযায়ী মানুষ বসবাস করে ও তারা যাতে পর্যাপ্ত নাগরিক পরিষেবা পায়, সেই চেষ্টা করা হয়েছে।
জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে এফএআর একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এফএআরের সূচক কমবেশি করার মাধ্যমে কোনো এলাকার ভবনের উচ্চতা ও আকার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুইভাবেই জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। যেমন এফএআরের সূচক যদি ১ হয়, তবে ভবনের উচ্চতা বাড়ালেও ভবনের মোট ব্যবহারোপযোগী মেঝের আকার একই থাকবে, ফলে উচ্চতা বাড়লেও লোকসংখ্যা বাড়বে না। সূচক যদি ১-এর বেশি হয়, তবে ভবনের উচ্চতা বাড়ালে ভবনে মোট ব্যবহারোপযোগী মেঝের আকার বাড়বে। ফলে একই প্লটে বসবাসযোগ্য মানুষের সংখ্যা আগের থেকে বেড়ে যাবে।
এই বাড়তি মানুষকে জায়গা দেওয়াটা আপাতদৃষ্টিতে মানবিক মনে হতে পারে। তবে ইতিমধ্যে সেই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক; সঙ্গে যে অতিরিক্ত মানুষ যোগ হচ্ছে, তাদের জন্যও। কারণ, এই অতিরিক্ত মানুষ শুধু ভবনের সেই বাড়তি জায়গাতেই থাকে না, তারা ভবনটি যেই পাড়া বা মহল্লায় অবস্থিত, সেখানেও ভাগ বসায়। কিন্তু ওই পাড়া বা মহল্লার রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমাসহ অন্যান্য অবকাঠামো, গণপরিসর—পার্ক, খেলার মাঠগুলোকে কিন্তু আর বহুতল করা যায় না।
এ ছাড়া এই বাড়তি মানুষ বিদ্যমান অবস্থার তুলনায় অতিরিক্ত ‘ট্রিপ জেনারেট’ করবে, অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করবে, অতিরিক্ত ময়লা-পানি ও আবর্জনা উৎপন্ন করবে, এমনকি অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ও তাপ উৎপন্ন করবে। ফলে যেকোনো বিবেচনায় জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। এফএআরের মাধ্যমে ঠিক সেই কাজই করা হয়ে থাকে। এফএআরের সূচক কখনো প্লটের আকার অনুযায়ী নির্ধারণ করা হতে পারে, কখনো সংলগ্ন রাস্তা অনুসারে, কখনোবা এলাকাভেদে নির্ধারিত হতে পারে, অথবা একাধিক প্রক্রিয়ায় বা অন্য কোনো উপায়ে। বিদ্যমান ভৌত অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধাদি বাড়তি জনসংখ্যার কতটুকু চাপ নিতে পারবে এবং ভবিষ্যতে এসব অবকাঠামো ও সুবিধার কতটুকু সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে এফএআরের সূচক নির্ধারণ করা হয়।
যেসব উদাহরণ দেওয়া হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যদি সব প্লটে একই সঙ্গে দুই বা তার বেশি তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মিত না-ও হয়, এরপরও কোনো প্লটে কেউ ইতিমধ্যে ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি আরেকজনের কোটা পূরণ করে ফেলেছেন আর নয়তলা করলে আরও দুজনের কোটা পূরণ করে ফেলেছেন।
এখন এমন প্রশ্ন উঠতে পারে, ফলে পরবর্তী সময়ে যিনি বাড়ি নির্মাণ করবেন বা করতে চান, তাঁকে বঞ্চিত করা হবে কি না, অথবা তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি না?
এই প্রশ্নের উত্তরের মূলে থাকবে সরকারের ‘আবাসননীতি’; অর্থাৎ পরিকল্পিত এলাকায় সরকার যখন কাউকে প্লট দেয়, তখন প্রকৃতপক্ষে তাঁকে তা ইজারা দেয় সেখানে বসবাসের জন্য। সেই প্লটে বাড়ি নির্মাণ করে বা প্লট কেনাবেচা করে ব্যবসা বা আয়রোজগার বাড়ানোর জন্য নয়। তবু সরকার চাইলে কিছু সম্পূরক নীতির দ্বারা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান আবাসনের চাহিদা পূরণে সহায়তা দিতে পারে। যেমন, সহজ শর্তে গৃহঋণ দিয়ে ভবন নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
ঢাকার ক্ষেত্রে প্লটমালিকদের অনেকেই এই সুযোগ নিয়ে একাধিক ও বহুতল ভবন নির্মাণ করে শহরের আবাসনের চাহিদা পূরণ করেছেন ঠিকই, কিন্তু সঠিক নিয়ন্ত্রণের অভাবে এই নীতির মাধ্যমে আমাদের নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত—সবাই এটাকে ব্যবসা ও পেনশন স্কিম বানিয়ে ফেলেছে। নতুন ড্যাপে নাগরিক সুবিধা বিবেচনায় বহুতল ভবন নির্মাণের সুযোগ কমিয়ে দিলেও প্লটের মালিক যাঁরা এখনো ভবন নির্মাণ করেননি, তাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত বা নাখোশ হওয়ার সংগত কোনো কারণ নেই, যেহেতু তাঁর কাছ থেকে প্লট কেড়ে নেওয়ার বা একতলা বাড়ি নির্মাণের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
রাস্তাসহ অন্য নাগরিক পরিষেবা পাড়া বা মহল্লা পর্যায়ে দেওয়া হলেও এগুলো মূলত প্রাথমিক, দ্বিতীয় ও তৃতীয়—এই তিন স্তরে আনুক্রমিকভাবে সংযুক্ত থেকে পুরো শহরে একটা অন্তর্জাল তৈরি করে। এ ছাড়া বেশ কিছু নাগরিক অবকাঠামো থাকে শহর পর্যায়ে, যেমন হাসপাতাল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বড় উদ্যান, স্টেডিয়াম, জাদুঘর, সম্মেলনকেন্দ্র ইত্যাদি।
একেবারে পাড়া বা মহল্লায় নাগরিক পরিষেবা হয় তৃতীয় স্তরের। এগুলো সংযুক্ত থাকে দ্বিতীয় স্তরের সঙ্গে এবং দ্বিতীয় স্তর সংযুক্ত থাকে প্রাথমিক স্তরের সঙ্গে, যা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বিস্তৃত থাকে। ফলে তৃতীয় স্তরের বাড়তি চাপের ঢেউ কিন্তু প্রাথমিক স্তরেও এসে পড়ে। সহজ ভাষায়, এই জটিল বিষয় বোঝার চেষ্টা করি রাস্তার উদাহরণ দিয়ে।
যদি তৃতীয় স্তরের রাস্তার ধারণক্ষমতা ১ হয় এবং ৪টি তৃতীয় স্তরের রাস্তা ১টি দ্বিতীয় স্তরের রাস্তার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তবে দ্বিতীয় স্তরের রাস্তার ধারণক্ষমতা হতে হবে ন্যূনতম ৪। আবার এ রকম ২০টি দ্বিতীয় স্তরের রাস্তা যদি ১টি প্রাথমিক স্তরের রাস্তার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তবে সেই প্রাথমিক স্তরের রাস্তার ধারণক্ষমতা হতে হবে ন্যূনতম ৮০।
এখন ধরি, পাড়া বা মহল্লা পর্যায়ে জনসংখ্যা বাড়ার ফলে তৃতীয় স্তরের রাস্তায় ট্রাফিক হলো ৩, তাহলে দ্বিতীয় স্তরের রাস্তায় ট্রাফিক হবে ১২, আর প্রাথমিক স্তরের রাস্তায় হবে ২৪০। গাণিতিকভাবে সব রাস্তায় ট্রাফিক তিন গুণ হলেও সংখ্যাগতভাবে ৩ আর ১-এর পার্থক্য ২, আবার ১২ আর ৪-এর পার্থক্য ৮ এবং ২৪০ আর ৮০-এর পার্থক্য ১৬০। সহজভাবে বললেও ব্যাপারটা অত্যন্ত জটিল। ঢাকায় প্রতিদিন আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যে দুঃসহ যানজটে পড়তে হয়, তার মূলে আছে এই সরল অঙ্কের জটিল হিসাব।
অন্য নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রেও ঠিক একই অবস্থা। ড্রেনের লাইন, পানির লাইনের ধারণ বা বহনক্ষমতা বাড়াতে হলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে আরও যানজট লাগাতে হয়।
অন্যদিকে নিয়মিত ব্যবহার ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গিয়ে ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শহর ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে। আবার বাড়তি জনসংখ্যার কারণে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে।
ফলে শহরের তাপমাত্রাও বাড়ছে। সর্বোপরি, শহর পর্যায়ের নাগরিক সেবাগুলোকে বিস্তৃত করার বা নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যেকোনো বিচারেই ঢাকা তার বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই নাগরিক সেবা, যোগাযোগ, সামাজিক, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় ঢাকাকে বাঁচাতে হলে এর জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
ড্যাপে জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে শুধু সংলগ্ন রাস্তার প্রস্থ অনুযায়ী প্লটভিত্তিক এফএআর না রেখে এলাকাভিত্তিক এফএআরের বিধান রাখা হয়েছে। উচ্চবিত্তরা বাস করে শহরের এমন এলাকাগুলোয় এফএআরের সূচক বেশি রাখা হয়েছে সেই এলাকার বর্তমান জনঘনত্ব, প্লটের আকার, পার্শ্ববর্তী ও সংলগ্ন রাস্তাসমূহ এবং বিদ্যমান অন্য ভৌত অবকাঠামো, পরিষেবা ও নাগরিক সুবিধার ওপর ভিত্তি করে। অন্যদিকে একই বিষয়গুলো বিবেচনায় মধ্যবিত্তরা বাস করেন শহরে, এমন এলাকাগুলোয় এফএআরের সূচক কম পেয়েছে। এরপরও এ ড্যাপে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার দেওয়ার মাধ্যমে ব্লকভিত্তিক ভবন নির্মাণ বা উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা হিসেবে বাড়তি এফএআরের প্রবিধান রয়েছে।
বলা হচ্ছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঢাকায় আবাসন-সংকট শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে ঢাকায় যতগুলো ভবন আছে, তার বেশির ভাগ ফ্ল্যাটেই লোকজন ভাড়ায় থাকেন। তাই এফএআরের সূচক বাড়ানো বা কমানোর সঙ্গে আবাসন-সংকট শুরু হওয়ার কার্যত কোনো সংযোগ নেই; বরং এফএআরের সূচক কমানোর ফলে নাগরিক সুবিধার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলা এবং উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা বিকেন্দ্রীকরণের পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সরকার যদি সত্যিই ঢাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য নিজস্ব বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে চায়, তাহলে উপযুক্ত নীতিমালা তৈরি করে বর্তমানে শহরে যেসব ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো প্লট বা ফ্ল্যাটহীন লোকজনের কাছে বিক্রির মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
• মোহাম্মদ রাসেল কবির, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স