রাজধানীতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছিল থেমে থেমে বৃষ্টি। বিকেলের দিকে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা বাড়ে। এতে বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ। যানজটের কারণে আধা কিলোমিটার দূরত্বের পথ অনেকে দুই ঘণ্টায়ও যেতে পারেননি।
আজ শুক্রবারও সারা দেশে এমন বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে দেশের তিন সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বরের রাতের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা ও যানজটে আটকে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন হাজারো মানুষ। সেদিন জলাবদ্ধ রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন।
গতকাল যানজটে আটকে পড়া লোকজন ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকেলের পর ফার্মগেট, বিজয় সরণি, বনানী, মহাখালী, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ ও ধানমন্ডিতে তীব্র যানজট লাগে। এর প্রভাব অন্যান্য সড়কেও ছড়িয়ে যায়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটে আটকে পড়া মানুষের ভোগান্তিও বাড়ে।
গতকাল ঢাকায় বৃষ্টি ঝরেছে ৫২ মিলিমিটার।
বিমানে করে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার। এ জন্য সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তিনি ফার্মগেটের খামারবাড়ি এলাকার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। কিন্তু রাত পৌনে নয়টার দিকেও তিনি বিজয় সরণি এলাকায় যানজটে আটকে ছিলেন।
ওই কর্মকর্তা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটায় বিমান ছিল। নির্ধারিত সময়ে বিমান ছেড়ে চলে গেছে। অথচ আমি এখনো (রাত পৌনে ৯টা) বিজয় সরণিতে পড়ে আছি।’
গতকাল কর্মস্থল থেকে বাসায় যেতে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায় সরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাজেদা আক্তারের। বিকেল পাঁচটায় তিনি কর্মস্থল মতিঝিল থেকে বাসার উদ্দেশে বাসে করে রওনা হন। মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের বাসায় পৌঁছান সাড়ে নয়টার দিকে। সাজেদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁও এলাকায় এক জায়গায় দুই ঘণ্টা ও মহাখালীতে এক ঘণ্টা বাস আটকে ছিল। এই সময় বাস একটুও নড়াচড়া করেনি। অন্য সময় বিকেলে বাসায় ফিরতে তাঁর গড়ে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান তিনি।
যানজটের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টির কারণে যানবাহনগুলো ট্রাফিক আইন না মেনে যে যার মতো চলছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। যে কারণে গাড়ি চলাচলের গতিও ধীর হয়ে গেছে।
রাজশাহীতেও জলাবদ্ধতার কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। রাজশাহীতে গত বুধবার বেলা ১টা থেকে গতকাল বেলা ১টা পর্যন্ত ২৪৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ১০ বছরের মধ্যে এটি রাজশাহীতে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিতে শহরের রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। স্থগিত করে দেওয়া হয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর নির্বাচনী পরীক্ষা। এই দুর্ভোগের মধ্যে নগরের পাড়া-মহল্লায় লোকজন জাল নিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে।
৩ নম্বর সতর্কসংকেত
আজ শুক্রবারও সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের তিন সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ু বেশি সক্রিয় থাকায় সাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগরের নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে আর কয়েক দিনের মধ্যে বিদায় নিতে শুরু করবে। দেশের ভেতরেও একটি স্থল নিম্নচাপ ছিল। এ দুটির প্রভাব একসঙ্গে মিশে বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজও রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামীকাল শনিবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।