পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে দেওয়া ডিগ্রি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের একাধিক সদস্য। শর্ত শিথিল করে তাঁকে ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি দেওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করেন তাঁরা।
বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বেনজীর প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনের শুরুতেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করেন কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। পরে শুরু হয় বক্তব্য। এ সময় কয়েকজন সিনেট সদস্য ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।
শর্ত শিথিল করে বেনজীর আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি ও ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেন সিনেট সদস্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, রঞ্জিত কুমার সাহা ও এম অহিদুজ্জামান।
রঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, ‘বেনজীর আহমেদকে ডিবিএ ডিগ্রি দেওয়ার অনুষ্ঠানে আমিও ছিলাম৷ তবে পর্দার আড়ালে যে এত কিছু আছে জানতাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা-অহংকারের জায়গাটা কারা নষ্ট করল? শর্ত পূরণ না করা হলেও বেনজীর কীভাবে ভর্তি হলেন? নিয়ম শিথিল করে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়।’ তাঁর ডিবিএ ডিগ্রি বাতিল করার জন্য উপাচার্যের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ায় কারচুপি, স্বজনপ্রীতি ও অন্যায় হয় না বলে আমরা বিশ্বাস করতাম; কিন্তু বেনজীর আহমেদের মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ভর্তির জন্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তাঁর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কী দায়বদ্ধতা আছে যে ভর্তির যোগ্যতা তাঁর জন্য কমাতে হবে? এর পেছনে কী রহস্য, তা জানা দরকার। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগে চাকরি গেছে, শাস্তিও হয়েছে। তাঁর ডিগ্রি বাতিল করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। এ ধরনের লোকের ডিগ্রি বাতিল করার প্রস্তাব সিনেটে পাস হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য তুলে ধরে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সিনেট সদস্য এ কে এম মাহবুব হাসান৷ তাঁর বক্তব্যের পর একজন সিনেট সদস্য এ বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব আহ্বান করেন। পাশ থেকে আরেকজন বলেন, নিন্দা প্রস্তাব যথাযথ; কিন্তু উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল তা গ্রহণ করেননি। উপাচার্য বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য যিনি করেন, তাঁর রুচিবোধ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
এ সময় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন সাদা দলের নেতা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, মির্জা ফখরুল অন্যায় কিছু বলেননি।
সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক কথা ধরলে বহু মানুষের বহু কথা নিয়েই আলোচনা করা যাবে, যেগুলো নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের মতোই। এ বিষয়ে নিন্দা প্রস্তাব না নেওয়াটাই ভালো বলে মনে করি।’
জবাবে পয়েন্ট অব অর্ডারে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকনেতা আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘সাদা দল থেকে নির্বাচিত সদস্যদের বক্তব্যে আমি বিস্মিত। এখানে মির্জা ফখরুলের সাফাই গাওয়াটা নিন্দনীয়। নিন্দা প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হোক।’
পরে বিএনপিপন্থী শিক্ষকনেতা মামুন আহমেদ বলেন, ‘রাজনীতির অঙ্গনে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের ভাষা-বক্তব্য আর আমাদের শিক্ষকদের ভাষা-বক্তব্য ভিন্ন রকম। কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরোধিতা করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের মর্যাদা সমুন্নত রেখেই তা করা উচিত।’
পরে আরও দু–একজন সিনেট সদস্য নিন্দা প্রস্তাব নেওয়ার পক্ষে বক্তব্য দেন।
সিনেট অধিবেশনে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিমের কড়া সমালোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। শুধু তাঁরা দুজন নন, সব সিনেট সদস্যই প্রত্যয় স্কিম স্থগিত বা বাতিলের পক্ষে বক্তব্য দেন।
প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাখ্যানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন জিনাত হুদা। নিজামুল হক তাঁকে সমর্থন করেন। উপাচার্য এটি গ্রহণ করেন। পাশাপাশি আলোচনার সম্ভাবনাগুলোর কথাও বলেন তিনি।
জিনাত হুদা বলেন, প্রত্যয় স্কিম সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। ৩০ জুন কোনো বিভাগে একজন প্রভাষক হিসেবে যোগ দিলে তিনি বিদ্যমান পেনশন স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন; কিন্তু এক দিন পর ১ জুলাই যিনি যোগ দেবেন, তিনি পড়বেন নতুন প্রত্যয় স্কিমে। একই রাষ্ট্রে দুই নিয়ম থাকতে পারে না।
অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন সিনেট সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি শিক্ষকনেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি অনুরোধ করছি, আন্দোলনে যাওয়ার আগে আর কী কী সুযোগ বা সম্ভাবনা আছে, তা দেখুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়– সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি আপনাদের পরামর্শ ও প্রস্তাব চাই, যাতে আমরা এটা নিয়ে কাজ করতে পারি। আমাদের যতটুকু চেষ্টা করার সুযোগ আছে, সেটি কাজে লাগাব।’