ঢাকা মহানগর এলাকায় নাগরিক সেবা নিশ্চিত না করে শুধু ভবন উঁচু করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
মন্ত্রী বলেছেন, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, বিনোদনকেন্দ্র, সবুজ এলাকা, জলাশয় ও পর্যাপ্ত রাস্তা না রেখে শুধু উঁচু উঁচু ভবন করা কি সমীচীন হবে? ঢাকায় শুধু মানুষের বাসস্থান নয়, বরং এর সঙ্গে সব নাগরিক সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। এটি সম্প্রতি পাস হওয়া ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়নের মাধ্যমে সম্ভব বলে মনে করেন তাজুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগর এলাকার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাটি গত ২৩ আগস্ট অনুমোদন দেয় সরকার। ড্যাপ পর্যালোচনায় গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন তাজুল ইসলাম।
নতুন এই ড্যাপে প্রথমবারের মতো জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আবাসিক ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে ঢাকা শহরে মানুষের চাপ কমে ও বাসযোগ্যতা বাড়ে। এটি করতে গিয়ে ড্যাপে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) মান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই এফএআরের মাধ্যমেই ভবনের আয়তন ও উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ড্যাপে এফএআরের যে মান দেওয়া হয়েছে, তাতে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ভবনের উচ্চতা আগের চেয়ে কমে আসবে। ফলে ঢাকায় বাসস্থানের সংকট তৈরি হবে। তবে নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করার জন্য ঢাকা শহরের আবাসিক ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নাহলে একসময় পরিত্যক্ত শহরের দিকে এগোবে ঢাকা শহর।
এমন প্রেক্ষাপটে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা সক্রিয়করণ’ শীর্ষক সেমিনারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য এবং দৃষ্টিনন্দন করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এই ড্যাপে। ঢাকায় সব মানুষকে সব ধরনের সুবিধা দিয়ে রাখা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য নগরের সব সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ দর্শন বাস্তবায়ন করছেন। ইতিমধ্যে অনেক সেবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ফলে সারা দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এসব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে গেলে ঢাকামুখী মানুষের চাপ কমবে।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, দেশে উৎপন্ন সব ধরনের বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ কয়েকটি সিটি করপোরেশনে কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগির বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশে বর্জ্য সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে।
সেমিনারে বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাভেদ আখতার, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস অ্যান্ড ম্যানুফেকচারার্স এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামীম আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।